দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞান: ক্যামিলা রয়োলের প্রতি জবাব

দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞান: ক্যামিলা রয়োলের প্রতি জবাব

মূল: টেরি সুলিভান   অনুবাদ: স ম আজাদ


মার্কসবাদ এবং সমাজের সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সংগ্রামে দ্বান্দ্বিকতা একটি কেন্দ্রীয় ধারণা। এই জার্নালে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা এবং বিশেষ করে জীববিজ্ঞানে দ্বান্দ্বিকতার ওপর ক্যামিলা রয়োল লিখিত একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধটিকে আমাদের স্বাগতম জানানো উচিত।

রয়োলের প্রবন্ধের সাথে একমত হওয়ার অনেক কিছুই আছে, যেমন একটি ব্যবস্থা যে পরিবর্তনসমূহের মধ্য দিয়ে যায় সেগুলোকে পরিচালিত করে এর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসমূহ (contradictions) এবং আমাদের কেবলমাত্র এই দ্বন্দ্বসমূহকে চিহ্নিত করলেই হবে না সাথে সাথে এদের মধ্যকার মেকানিজমসমূহকে অনুধাবন করতে হবে। অধিকন্তু,“উপযোগী গঠন” (niche construction) (নিচে দেখুন)এর ওপর জীববিজ্ঞানী রিচার্ড লেভোন্টিনের কাজের উল্লেখ স্পষ্টায়িত করে যে জীববিজ্ঞানে অন্তত একটি পরিবর্তনের দ্বান্দ্বিক প্যাটার্নের উদাহরণ রয়েছে।

যাহোক, কতগুলো বিষয় আছে যেখানে তাঁর বিশ্লেষণ জোরদার করা যেতো। উদাহরণস্বরূপ,  দ্বান্দ্বিকতার একেবারে মর্মে নিহিত আছে দ্বন্দ্ব (contradiction) - তাঁর এই দ্বন্দ্বের বর্ণনা আরো বেগবান করা যেতো স্বয়ং মার্কস ও এঙ্গেলসের লেখালেখির সহায়তা নিয়ে। অধিকন্তু, আরো কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে তিনি ভ্রান্ত বলে আমি মনে করি। আমি আরো যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করার সুযোগ নেব যে দুনিয়াটা উপলব্ধি করতে দ্বা›িদ্বকতা কীভাবে সহায়তা করে, এটি একটি অনুসন্ধানমূলক ডিভাইস হিসেবে সবথেকে বোধগম্য হয়, অর্থাৎ, সাদামাটাভাবে, সমস্যাবলী সমাধানের জন্য এটি একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি কিন্তু এটি সঠিক সমাধানের নিশ্চয়তা নয়।

দ্বান্দ্বিকতা: পরিবর্তন, সমগ্রতা এবং দ্বন্দ্ব

রয়োল দাবী করেন: “অনেক তাত্ত্বিকদের জন্য দ্বান্দ্বিকতার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ  দিক হলো পরিবর্তন ও দ্বন্দ্ব” (change and contradiction)। এটি সত্য হতে পারে; যাহোক, আমি যুক্তি দিতে চাই যে প্রকৃত পক্ষে দ্বান্দ্বিকতার তৃতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বা উপাদান রয়েছে, তাহলো সমগ্রতা (totality)। এটি কেবলমাত্র মার্কস ও এঙ্গেলসের ক্ষেত্রেই সত্য নয়, সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক কালের মার্কসবাদীগণ যেমন জর্জি নোভাক ও জন রিজের ক্ষেত্রেও সত্য।

অধিকন্তু, রয়োল নিজেও মনে হয় একমত। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ডেভিড হারভের কার্টেসিয় রিডাকশনিজমের প্রত্যাখানের অনুকুলে লেখেন, যেটি “এই ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত যে আমরা দুনিয়াটাকে পৃথকায়িত ‘বস্তুসমূহে’ ভাগ করে অধ্যয়ন করতে পারি। কার্টেসিয়গণ যুক্তি দেন যে অংশসমূহের নিজস্ব ধর্মাবলী আছে যা সমগ্র থেকে স্বাধীনভাবে অস্তিত্বমান, আমরা প্রত্যেকটি অংশ পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারি এবং তারপর কীভাবে তারা সম্পর্কিত তা দেখতে পারি।”

এমনকি যেখানে দ্বান্দ্বিকতা সমাজ অধ্যয়নে প্রয়োগ করা হয়, সেখানেও সার্বজনীনভাবে একমত হওয়া যায়নি যে  দ্বান্দ্বিকতা কী অথবা কিসের জন্য ব্যবহৃত হবে। এই আলোকে দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞান বিবেচনা করার পূর্বে এটি বিবেচনা করা কেজো যে কীভাবে মার্কস ও এঙ্গেলস দ্বান্দ্বিকতাকে উপলব্ধি করেন এবং ব্যবহার করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিষয়টি একজন যেভাবে ইচ্ছাপোষণ করেন সেরকমটি সাদাসিদা নয়। ১৮৫৮এ এঙ্গেলসকে একটি চিঠিতে মার্কস লেখেন: “যদি এধরনের কাজের সুযোগ আবার পাওয়া যেতো, তাহলে ছাপার অক্ষরের দুই বা তিন পৃষ্ঠায় আমি সাধারণ মানব বুদ্ধির অধিগম্য করে হেগেল আবিষ্কৃত পদ্ধতিটিতে যা যৌক্তিক তা লিখতাম, যেটিকে তিনি একই সময়ে রহস্যবাদ দিয়ে ঘিরে রাখেন।” যাহোক, মার্কস কখনো তাঁর ইচ্ছেটিকে বাস্তবে রূপায়িত করতে সময় পাননি। তা সত্তে¡ও, বিভিন্ন জায়গায় তাঁর দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির ওপর তাৎপর্যপূর্ণ বিবৃতি রয়েছে, যেমন A Contribution to the Critique of Political Economy-এর মুখবন্ধে, পুঁজি গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের মুখবন্ধে, পুঁজি গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডের Afterword-এ এবং এঙ্গেলসের সাথে যৌথভাবে লিখিত The German Ideology-এর প্রথম অংশে। দ্বন্দ্বের ধারণায় ফিরে যাওয়ার পূর্বে প্রথমে আমি পরিবর্তন এবং পরে সমগ্রতা বিবেচনা করবো।

মার্কস ও এঙ্গেলসের দ্বন্দ্বতত্ত্ব ধারণ করে যে, অস্তিত্বশীল প্রপঞ্চসমূহকে বিবেচনা করা হয় একটি চলমান প্রক্রিয়ার (continuing process) পর্যায়সমূহরূপে। এঙ্গেলস লেখেন যে হেগেলের দর্শনের “অত্যুচ্চ গুণ” হলো:

প্রথম বারের মতন প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সমগ্র দুনিয়াকে গণ্য করা হয় একটি প্রক্রিয়া হিসেবে, অর্থাৎ সতত গতি, পরিবর্তন, রূপান্তর, বিকাশের মধ্য দিয়ে; এবং অভ্যন্তরীণ সংযোগ চিহ্নিত করতে চেষ্টা করা হয় যা এই সকল আন্দোলন ও বিকাশের একটি ধারাবাহিক সমগ্র তৈরী করে।

একইভাবে পুঁজি গ্রন্থের দ্বিতীয় জার্মান সংস্করণের অভঃবৎড়িৎফ-এ মার্কস অনুমোদনসহ একজন রুশ রিভিওকারী কর্তৃক তাঁর পদ্ধতির বর্ণনার উদ্ধৃতি দেন,  যিনি পর্যবেক্ষণ করেন যে “এটা বলা যায়, অর্থনৈতিক জীবনের সাধারণ নিয়মাবলী একটি এবং একই, এটি কোনো বিষয় না যে সেগুলো বর্তমান অথবা অতীতে প্রয়োগকৃত হয়। এটি মার্কস সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর মতে, এ ধরনের বিমূর্ত নিয়মাবলীর অস্তিত্ব নেই। বিপরীত ক্রমে, তাঁর অভিমত হলো প্রত্যেক ঐতিহাসিক কালপর্বের নিজস্ব নিয়মাবলী আছে”। এইভাবে, মার্কসের জন্য এটি মনে হয় যে কেবলমাত্র সমাজই পরিবর্তনের ধ্রুব অবস্থায় (in a constant state of flux) বিদ্যমান থাকে না, সঙ্গে সঙ্গে সমাজসমূহ পরিচালিত করে খোদ যে নিয়মগুলো সেগুলোও পরিবর্তনের বিষয়। অধিকন্তু অস্তিত্বমান প্রপঞ্চগুচ্ছকে একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার পর্যায়সমূহ হিসেবে গণ্য করা কোনক্রমেই প্রত্যেকটি অংশ একটি সমগ্রের উপাংশ হিসেবে বিবেচনা করার চেয়ে ঊণ গুরুত্বপূর্ণ নয়। সমগ্রতা দ্বারা মার্কস মোটামুটিভাবে এই অর্থ করেন যে যখন কোনো প্রপঞ্চকে বিবেচনা করা হয়, তখন এটাকে অবশ্যি স্বীকৃতি দিতে হবে যে প্রত্যেকটি আপাত প্রতীয়মান পৃথক উপাদান (separate element) প্রকৃত পক্ষে একটি সমগ্রের সাথে সম্পর্কিত। পুঁজি গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে মার্কস বারবার তাঁর অনুসন্ধানের পদ্ধতির বৈশ্বিক দিকের উল্লেখ করেন। মার্কসের মতে যে কোনো অর্থনৈতিক কর্ম যতই মামুলি হোক না কেন, যেমন ক্রয় অথবা বিক্রয় যা দিনে বিলিয়ন বিলিয়ন বার সংঘটিত হয়, তা অস্বচ্ছ প্রতীয়মান হয়, যদি না সমগ্র পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে বিবেচনা না করা হয়। তিনি লেখেন:

প্রত্যেকটি ব্যক্তিক পুঁজির রূপসমূহ, যা একটি ব্যক্তিকৃত ভগ্নাংশ, যে ভগ্নাংশ ব্যক্তিক জীবনের সাথে ওৎপ্রেতভাবে জড়িত, এই রূপসমূহ যেন সামষ্টিক সামাজিক পুঁজির অনুষঙ্গ, যেমন প্রত্যেক ব্যক্তিক পুঁজিপতি পুঁজিপতি শ্রেণীর স্বাতন্ত্রিক অংশ ছাড়া আর কিছ্ইু নয়। সামাজিক পুঁজির সঞ্চালনে (movement) অন্তর্ভুক্ত থাকে এর ব্যক্তিকৃত ভগ্নাংশিক অংশসমূহের সঞ্চালনের সমগ্রতা, যা হলো স্বাতন্ত্রিক পুঁজিসমূহের টার্নওভার। ঠিক যেমন স্বাতন্ত্রিক পণ্যের রূপান্তর (metamorphosis of the individual commodity) হলো পণ্য-বিশ্বের রূপান্তরসমূহের একটি সংযোগ। পণ্যসমূহের সঞ্চালন এবং সুতরাং স্বাতন্ত্রিক পুঁজি এবং এর টার্নওভার হলো সামাজিক পুঁজি কর্তৃক বর্ণনাকৃত সার্কিটে একটি সংযোগ। অন্য কথায়, যদি আমরা পুঁজির স্বাতন্ত্রিক অংশসমূহের সঞ্চালন উপলব্ধি করতে চাই তবে আমাদের অবশ্যি বুঝতে হবে যে সেগুলোর সঞ্চালন প্রকৃতপক্ষে একটি একক প্রক্রিয়ার অংশ এবং এইভাবেই তাদের সম্পর্কে উপলব্ধি করা যাবে।

দ্বা›িদ্বকতার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দ্বন্দ্ব, এবং একবার এটিকে সমগ্রতার প্রেক্ষাপটে স্থাপন করে রয়োল সঠিক ছিলেন এই যুক্তি প্রদান করে যে “অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসমূহ পরিবর্তনকে সামনের দিকে ধাবিত করে এবং আমরা যে গতিশীলতা (dynamism) পর্যবেক্ষণ করি তার দিকে চালনা করে। তিনি দ্বন্দ্বের ধারণার চিত্রকল্প দেন ডেভিড হারভের একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে: তিনি যুক্তি দেন যে ব্রিটিশ লেবার পার্টি  একটি বুর্জোয়া সংগঠন প্রধাণত শ্রমিক শ্রেণীর সদস্যতাসহ। এর দ্বন্দ্বমূলক প্রকৃতি (contradictory nature) উপলব্ধি করতে তিনি জোর দেন যে হারভের দৃষ্টিভঙ্গি “দ্বন্দ্বসমূহের প্রকৃত উপস্থিতিকে স্বীকৃতি দেয় সাথে সাথে সেগুলো কীভাবে বিকশিত হয় তার কৌশলসমূহ অন্বেষণ করে।” এইভাবে লেবার পার্টির দ্বন্দ্বমূলক প্রকৃতি উপলব্ধি করতে আমাদের অবশ্যি স্বীকার করতে হবে যে এটি এমন একটা সময়ে অস্তিত্বমান হয় যখন শ্রমিকগণ সংস্কারবাদী ধারণাবলী এবং পার্টিসমূহের দিকে ধাবিত হয় এবং  উদীয়মান কল্যাণ রাষ্ট্র পুঁজির অংশসমূহের নিকট বর্ধিতমাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

রয়োল এই জোর দিয়ে সঠিক কাজটি করেন যে দ্ব›দ্বসমূহের অন্বেষণ ও স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয় আমাদের অবশ্যি তাদের সাথে জড়িত কৌশলসমূহ উপলব্ধিকরণ অন্বেষণ করতে হবে। যাহোক, এটা লক্ষ্য করা জরুরী যে এটিই হলো মার্কস ও এঙ্গেলসের নিজেদের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা আমি নিচে দেখাবো। অধিকন্তু, আমি যুক্তি দিতে ইচ্ছুক যে মার্কস ও এঙ্গেলসের এমনকি দ্বন্দ্বের ধারণার ওপর অধিকতর সমৃদ্ধ বর্ণনা রয়েছে।

জার্মান ভাবাদর্শে মার্কস ও এঙ্গেলস লেখেন যে এ পর্যন্ত সমাজ সর্বদা বিকশিত হয়েছে দ্বন্দ্বের ফ্রেমওয়ার্কের ভেতরে - প্রাচীন কালে ফ্রিম্যান ও দাসদের সাথে দ্বন্দ্ব, মধ্যযুগে অভিজাত ও সার্ফদের মাঝে, আধুনিক কালে বুর্জোয়া শ্রেণী ও প্রোলেতারিয়েতদের মাঝে। মার্কস ও এঙ্গেলসের দ্বন্দ্বের ধারণার তিনটি প্রধান অভিমুখ রয়েছে। প্রথমটি হলো এই যে দ্বন্দ্ব “বিপরীতসমূহ”-এর সমাহার। তারা এই অর্থে বিপরীত যে তারা হলো পরস্পরবিরোধী ধরনের, একে অপর থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক। যাহোক, তারা অধিকতর জোরালো অর্থেও বিপরীত, অর্থাৎ দ্বন্দ্বসমূহের ধারণাবলী অথবা মেরুসমূহ আস্তিত্বিকভাবে (existentially) একে অপরের জন্য শর্তস্বরূপ প্রয়োজনীয়। অর্থাৎ, দ্বন্দ্বের মেরুসমূহ একে অপরের জন্য প্রয়োজনীয় এবং একে অপর থেকে  বিচ্ছিন্নভাবে (in isolation) অচিন্তনীয় (inconceivable)। উদাহরণস্বরূপ, নিকটকে কমপক্ষে ইঙ্গিতে উপলব্ধি করতে হলে দূরকে উপলব্ধি করতে হবে। একইভাবে বুর্জোয়াজী অথবা পুঁজিতান্ত্রিক শ্রেণীকে বুঝতে হলে প্রোলেতারিয়েত বা শ্রমিক শ্রেণীকে বুঝতে হবে। পুঁজিতান্ত্রিকরা অর্থনৈতিক উৎপাদনের উপায়সমূহের মালিক এবং এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু কাজে নিয়োজিত করতে দরকারি শ্রমশক্তির মালিক তারা নয়। বরং তাদের দরকার অন্য শ্রেণীর অর্থাৎ প্রোলেতারিয়েতদের, যে শ্রেণীটির বেঁচে থাকতে এর শ্রমশক্তি বিক্রয়ের দরকার হয়। সংক্ষেপে,  পুঁজিপতিদের অস্তিত্বের জন্য সেখানে অবশ্যি শ্রমিকদের থাকতে হবে এবং শ্রমিকদের অস্তিত্বের জন্য সেখানে অবশ্যি পুঁজিপতিদের থাকতে হবে।

দ্বন্দ্বের ধারণার দ্বিতীয় বিশেষ দিক হলো এই যে একটা উপায় আছে যার সাহায্যে দ্বন্দ্বের দুটি মেরু একে অপরকে প্রভাবিত করে, অর্থাৎ তাদের মধ্যে একটি প্রতিক্রিয়া কৌশল (feedback mechanism) বিদ্যমান। এটি একটি দরকারি পয়েন্ট যা হার্ভেকে অনুসরণ করে রয়োল তৈরী করেন। যখন নিকট ও দূরকে একটি দ্বন্দ্বের দুটি মেরু হিসেবে গণ্য করা হয়, তখন কোনো প্রতিক্রিয়া কৌশল বিদ্যমান থাকে না যেটি একে অপরকে প্রভাবিত করে। যাহোক, মার্কসের মতে অনেক দ্বন্দ্বের মেরুগুলোর মধ্যে এ ধরনের কৌশল বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, শ্রমিকশ্রেণী এবং পুঁজিপতি শ্রেণীর মধ্যে প্রতিক্রিয়া কৌশল (feedback mechanism) হলো শ্রেণী সংগ্রাম। এটা খেয়াল করা জরুরী যে দ্বন্দ্বের প্রত্যেকটি মেরু অপর মেরুকে প্রভাবিত করার অনুমোদন দেয় প্রতিক্রিয়া কৌশল। অধিকন্তু, প্রতিক্রিয়া কৌশল পুরোপুরি মাত্র একবার সংঘটিত ফলাফল নয়; বরং এটি সম্ভব করে তোলে মিথষ্ক্রিয়াসমূহের একটি চলমান প্যাটার্ন।

দ্বন্দ্বের মার্কসিয় ধারণার তৃতীয় প্রধান দিক হলো এই যে দ্বন্দ্বের দুটি মেরুসমূহের মধ্যকার সংঘর্ষ বা উত্তেজনা (conflict or tension), এবং এটি প্রতিক্রিয়া কৌশলের মাধ্যমে সেই সংঘর্ষ , যা ঐ মেরুসমূহের মিথষ্ক্রিয়াগুলোকে উদ্দীপিত করে। অর্থাৎ, স্বয়ং ব্যবস্থাটির অভ্যন্তরে সংঘর্ষের ফলে ব্যবস্থাটি যে পরিবর্তনসমূহের অভিজ্ঞতা লাভ করে দ্বন্দ্বের ধারণার তৃতীয় দিকটি তা শনাক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, পণ্যদ্রব্যাদি বিক্রয় করতে পুঁজিতান্ত্রিক ফার্মসমূহ একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে বাধ্য হন। বিক্রয় বৃদ্ধি করার একটি উপায় হলো ব্যয় হ্রাস করা। এবং যেহেতু সার্বিক ব্যয়সমূহের প্রধান উপাদান হলো মজুরি, কাজেই পুঁজিপতিগণ মজুরি হ্রাস করতে চেষ্টা করে। বিপরীতক্রমে, মেহনতিদের একমাত্র আয় হলো তাদের শ্রম-ক্ষমতার বিনিময়ে গ্রহণকৃত মজুরিসমূহ, তাই তারা পুঁজিপতিগণ কর্তৃক মজুরি হ্রাসের প্রচেষ্টাসমূহকে প্রতিরোধের প্রবণতা দেখায়। এখানে আমরা দেখতে পাই কীভাবে দ্বন্দ্বের একটি মেরু অপরটির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং এটি স্পষ্টায়িত করে যে পুঁজিতন্ত্র যা উদ্দীপ্ত করে তা হলো স্বয়ং পুঁজিতন্ত্রের অভ্যন্তরের সংঘর্ষসমূহকে।

সংক্ষেপে, আমরা দেখতে পাই যে মার্কস ও এঙ্গেলসের দ্বন্দ্বের ধারণাতে বিপরীতসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকে যা আস্তিত্বিকভাবে একে অপরকে অবশ্যাম্ভাবী করে তোলে এবং তাদের মধ্যে একটি প্রতিক্রিয়া কৌশল (feedback mechanism) বিদ্যমান থাকে যেটি পরস্পর পরস্পরকে প্রভাবান্বিত করে। এইভাবে এটাই একমাত্র ঘটনা নয় যে যদি একজনের পুঁজিপতি সম্পর্কে ধারণা থাকে তবে তিনি শ্রমিকদের উপলব্ধি করতে পারেন (এবং এটি বিপরীত দিক থেকেও সত্য), সাথে সাথে একটি উপায়ও বিদ্যমান থাকে যার দ্বারা শ্রমিকদের কর্মকান্ডসমূহ পুঁজিপতিদের প্রভাবান্বিত করে (এবং এটি বিপরীত থেকেও সত্য)। পরিণামে, এই পরিবর্তনের উৎস হলো দ্ব›দ্ব অথবা ব্যবস্থাটির মেরুসমূহের মধ্যকার সংঘর্ষ।

আমি এখানে বলতে চাই যে রয়োল এটি লক্ষ্য করে সঠিক কাজটি করেছিলেন যে দুনিয়াকে বুঝতে দ্বন্দ্ব (dialectic) একটি পদ্ধতি, অর্থাৎ  জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারণা (epistemological concept), সঙ্গে সঙ্গে মার্কস ও এঙ্গেলসের জন্য দ্ব›দ্ব হলো স্বয়ং দুনিয়ার প্রকৃতি সম্পর্কে একটি দাবী, অর্থাৎ একটি  সত্তাতাত্ত্বিক (ontological) দাবী। যেমনটি এঙ্গেলস এন্টি-ডুরিং-এ লেখেন: “আমার প্রকৃতির মধ্যে দ্বন্দ্বতত্ত্ব নির্মাণের কোনো প্রশ্নই আসে না, বরং প্রশ্ন হলো প্রকৃতির মধ্যে এটি আবিষ্কারের এবং প্রকৃতি থেকেই এটির উদ্ভবের”।

সংক্ষেপে বলা যায় যে মার্কস ও এঙ্গেলসের দ্ব›দ্ব তত্তে¡ তিনটি উপাদান বিদ্যমান। প্রথম উপাদানটি হলো দুনিয়াটাকে দেখতে হবে সমগ্র হিসেবে। দ্বিতীয়টি হলো সমগ্রটি পরিবর্তনের একটা নিত্য প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয়টি এই যে পরিবর্তন হলো দ্ব›েদ্বর মেরুসমূহের মধ্যকার বিরোধের ফসল। এইভাবে, মার্কস ও এঙ্গেলস অনুসারে, যদি আমরা আমাদের চারপাশের দুনিয়াটাকে বুঝতে চাই, যেমন আমরা যদি পুঁজিতন্ত্রকে বুঝতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যি সামাজিক সম্পর্কসমূহ যেমন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ভাবাদর্শিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কসমূহের সমগ্রতা (totality) দিয়ে শুরু করতে হবে। এবং এই স্বীকৃতিও দিতে হবে যে এই সমগ্রতা নিয়ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অধিকন্তু, দ্বন্দ্বের মেরুসমূহের বিরোধীতার ফসল হলো এই “সমগ্র পরিবর্তন”-এর প্রক্রিয়া।

দ্বান্দ্বিকতা কী, এটি এখন আমাদের নিকট স্পষ্টায়িত, আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি পরিবর্তনের এই প্যাটার্ন ও বয়ান জীববিজ্ঞানও ধারণ করে কিনা।

উপযোগী গঠন (Niche construction) : দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানের দৃষ্টান্ত

স্বঘোষিত দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানী রিচার্ড লেভোন্টিনের কাজ থেকে রয়োল দ্বান্দ্বিকতার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত দেন। এই দৃষ্টান্তটি দেখায় যে কিছু জীবতাত্ত্বিক প্রপঞ্চ (biological phenomena) আছে যেগুলো দ্বান্দ্বিকতার তিনটি মূল দিককে সঠিকভাবে বৈশিষ্ট্যায়িত করে। অধিকন্তু, যদিও এটি আমি যে পর্যন্ত না পরবর্তীতে আলোচনা না করছি ততক্ষণ স্পষ্টায়িত হবে না, কীভাবে  দ্বান্দ্বিকতা আমাদের দুনিয়াটা জানতে সহায়তা করে , এটিকে সবথেকে ভালোভাবে ভাবা যায় একটি অনুসন্ধানমূলক ডিভাইস (heuristic device) হিসাবে।

প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা বির্বতনের টিপিক্যাল বর্ণনা প্রণীত হয় অভিযোজন প্রক্রিয়া এবং উপযোগী স্থান (niches) অথবা বাস্তুসাংস্থানিক ভূমিকার আলোকে, যেগুলো প্রজাতিসমূহ বাস্তু-ব্যবস্থায় প্রয়োগ করে। প্রজাতির পরিবেশ বজায় থাকে এবং পরিবর্তিত হয় স্বয়ং প্রজাতিটির বাইরের কিছু সার্বভৌম শক্তিসমূহের কারণে। এই বাইরের দুনিয়া প্রজাতিটির জন্য সমস্যা তৈরী করে: স্থ্ান, ভোগ্য সামগ্রীসমূহ (consumables), আলোক অর্জনের সমস্যা এবং প্রজননের জন্য ব্যক্তির বিপরীত লিঙ্গের অভিগম্যতার সমস্যা। সমস্যাবলী সমাধানকল্পে তারাই সবচেয়ে সফল, যাদের দৈহিক ও আচরণিক বৈশিষ্ট্যাবলী এটা করতে সবচেয়ে উপযুক্ত, বেশি সন্তান-সন্ততি রেখে যায় এবং এভাবে প্রজাতি পরিবর্তিত হয় ও অভিযোজিত হয়। কার্টেসিয় রিডাকশনিজম (Cartesian reductionism) দ্বারা সুপারিশকৃত লাইন বরাবর অভিযোজন ও উপযোগী স্থান (adaptation and niches) বিভাজিত বলে প্রতীয়মান হয়: অর্থাৎ কারণ ও প্রভাব (causes and effects), বহিঃস্থ ও অন্তঃস্থ ((external and the internal), পরিবেশ এবং এর দ্বারা “ধারণকৃত” জীবসত্তা।

যদিও এই গঠন তালার জন্য নিঁখুত, যেহেতু চাবি কেবলমাত্র সিলিন্ডারকে চালনা করে এবং এর বিপরীতটি নয়, কিন্তু এটি একটি মারাত্মক সমস্যাকে উত্থাপন করে বলে প্রতীয়মান হয় যখন এটিকে জীববিজ্ঞানীয় পরিবর্তনের একটি মডেল হিসেবে নেয়া হয়। একটি সমস্যা লেভোন্টিন চিহ্নিত করেন যে জীব-সত্তার বহিঃস্থ দুনিয়াকে অসীম সংখ্যক উপায়ে বিভক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু, জীব-সত্তার অনুপস্থিতিতে কীভাবে আমরা বলতে পারি যে এই উপায়গুলোর কোনগুলো উপযোগী স্থান ((niches), অর্থাৎ, বাস্তুতান্ত্রিক ভূমিকাবলী যা এটি পূরণ করতে পারে?  অধিকন্তু, যদি না আমরা এটা করি, তাহলে এটি আর স্পষ্টায়িত হবে না যে উপযোগী স্থানের ((niches) এই ধারণা বজায় রাখার কি মানে হতে পারে। বরং এটি প্রতীয়মান হয় যে আমরা কেবলমাত্র একটি “পরিবেশ”কে স্বীকৃতি দিতে পারি যখন আমরা জীবসত্তাটি দেখি যার এই পরিবেশটি নিজস্ব। যেমনটি লেভোন্টিন যুক্তি দেন, “জীবসত্তার সাথে সম্পর্ক ব্যতিত একটি পরিবেশকে বর্ণনা করা যায় না, যে জীবসত্তা এটির সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে এবং এটিকে সংজ্ঞায়িত করে। জীবসত্তা এবং পরিবেশ দ্বা›িদ্বকভাবে সম্পর্কায়িত। পরিবেশ ব্যতিত  জীবসত্তা নেই এবং জীবসত্তা ব্যতিত পরিবেশ নেই।

উপযোগী স্থান ((niches) কোনো পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত টেমপ্লেট নয়, এটির পরিবর্তে লেভোন্টিন যুক্তি দেন যে জীবসত্তাসমূহই বরং তাদের উপযোগী স্থান বিনির্মাণ করে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, তৃণভোজী প্রাণীসমূহ তাদের খাদ্য গ্রহণের প্যাটার্ন দিয়ে তাদের পরিবেশ রূপান্তরিত করতে পারে। ডারউইন বর্ণনা করেন কেঁচোসমূহের খোঁড়াখুঁড়ি মৃত্তিকাভ্যন্তরে জৈব বস্তুসমূহ টেনে অজৈব বস্তুসমূহের সাথে মিশ্রিত করে এবং তাদের প্রক্ষেপণ করে (casting), যা জীবাণুর কার্যকলাপের (microbial  activity) জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করে, এগুলো কীভাবে মৃত্তিকার গঠন ও রসায়ন পরিবর্তন করে তা ডারউইন বর্ণনা করেন।

জীবসত্তাসমূহ এবং তাদের পরিবেশসমূহের মধ্যকার সম্পর্কের দ্বা›িদ্বক প্রকৃতি পরিচ্ছন্নভাবে প্রতীয়মান হয়। একজনকে ঠিক পরিবেশ অথবা জীবসত্তা বিবেচনা করলে চলবে না, বরং উভয়কে বিবেচনায় নিতে হবে, সমগ্রতা (totality) হিসেবে। অধিকন্তু, উপযোগী স্থানসমূহ জীবসত্তাসমূহ দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট টেমপ্লেট নয়। বরং তারা প্রতিনিয়ত একটি সদা-পরিবর্তনশীল কর্ম পদ্ধতিতে গঠিত হচ্ছে। চুড়ান্তভাবে, জীবসত্তা ও পরিবেশের পারস্পরিক প্রভাব (reciprocal influence) প্রতীয়মান হয় কার্যকারণসম্বন্ধের (causation) একটি ধরনের দৃষ্টান্ত হিসেবে, যা নিয়ে দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞান তর্ক-বিতর্ক করে, তা জীববিজ্ঞানে বিদ্যমান।

সম্ভবতঃ দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানের অধিকতর স্পষ্ট উদাহরণ হলো শিকারী ও শিকারের মধ্যকার সম্পর্ক। শিকারী ও শিকার হলো পরস্পরের বিপরীত এই  অর্থে যে তারা হলো বিপ্রতীপ ধরনের, একে অপর থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। যাহোক, তারা পরস্পরের বিপরীত এই জোরালো অর্থে যে  দ্বন্দ্বের মেরুসমূহের একে অপরকে প্রয়োজন এবং  একে অপর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অননুভবনীয়। শিকার ছাড়া শিকারী নাই পরন্তু একইভাবে শিকারী ছাড়া শিকার নাই। শিকারী ও শিকারের মধ্যকার সংঘাত সম্পূর্ণতঃ স্পষ্ট এবং প্রতিক্রিয়া কৌশলটি হলো উদ্বর্তনের জন্য তাদের চলমান সংগ্রাম।

এটা যুক্তি দেয়া যেতে পারে যে শিকারী ও শিকারের মধ্যকার সম্পর্ক শুধুমাত্র দ্বা›িদ্বক এই মামুলি অর্থে যে শিকারীর ধারণা পরোক্ষে শিকারের উপর নিহিত। কিন্তু এটি একটি ভুল হতে পারতো, যদি এমনটি যুক্তি দেয়া হতো যে শ্রমিকদের ও পুঁজিতন্ত্রীদের মধ্যকার সম্পর্ক কেবলমাত্র দ্বান্দ্বিক এই মামুলি অর্থে যে শ্রমিকের ধারণা পরোক্ষে বস বা পুঁজিতন্ত্রীর উপর নিহিত।  উভয় ঘটনা এমন দৃষ্টান্ত যেখানে দ্বন্দ্বের মেরুসমূহ একে অপরের অস্তিত্বের অপরিহার্য শর্ত, কিন্তু তারা গতিময়তাও প্রকাশ করে যা মিথষ্ক্রিয়ার জটিল ও চলমান প্যাটার্নগুলোকে ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে। অধিকন্তু, এটি স্পষ্ট করতে আমি যুক্তি দিচ্ছি না যে অবশ্যি একটি প্রতিক্রিয়া কৌশল আছে যা নিশ্চয়তা দেয় যে যে প্রজাতিকে শিকার করা হয় তা অবশ্যি কোনো-না-কোনোভাবে নিজেদের প্রজনন করে যেন শিকারিদের জন্য খাদ্যের অনিঃশেষ সরবরাহের উৎস হয়। এটি স্পষ্টতই ভুল হবে যেহেতু প্রজাতিসমূহ নিশ্চিহ্ন হতে পারে এবং নিয়মিতভাবে নিশ্চিহ্ন হয়। ঠিক যেভাবে যুক্তি দিলে ভুল হতো যে পুঁজিতন্ত্রের মধ্যে প্রতিক্রিয়া কৌশল নিশ্চয়তা দেয় যে সবসময় বেশী বেশী শ্রমিক পুনঃউৎপাদিত হবে। এটি সত্য হতে পারে না। নয়তো কখনই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হতে পারেনা, যে বিপ্লব খোদ শ্রমিকের (এবং পুঁজিপতির) ধারনা খারিজ করে দেয়।

মোটের উপর জীববিজ্ঞানে দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি নেই?

অভিযোজন ও শিকারি-শিকার সম্পর্কের মাধ্যমে আমরা স্পষ্টভাবে দেখেছি যে জীববিজ্ঞানে কমপক্ষে মাঝে মাঝে একটি ডায়ালেকটিক কাজ করে। অধিকন্তু, আমি এখানে সুপারিশ করি যে এটা নিশ্চিতভাবে কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয় যে একজন স্বঘোষিত “দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানী” অভিযোজনের দ্বান্দ্বিক তত্ত্ব বিকশিত করেছেন। অধিকন্তু, রয়োল নিজেই দাবী করেন যে “জীববিজ্ঞানী হিসেবে দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানী গ্রন্থের সহ-লেখক রিচার্ড লেভিন্সের (Richard Levins) সাথে লিভোনটিন (Lewontin) দ্বান্দ্বিকতাকে একটি পদ্ধতি হিসেবে অভিযোজন করেন এবং অন্তর্ভুক্ত করেন তাঁদের অনুশীলনে”। যাহোক, রয়োল তখন দাবী অব্যাহত  রাখেন যে কেবলমাত্র লেভিন্স ও লিভোনটিনই নন, স্টেফান জে গৌল্ড ও স্টেভেন রোজ “বিবৃত করেন যে তারা যখন ল্যাবরেটরিতে যান তখন তারা যা করেন সেটা অন্যরা যা করে একই পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করে একই বিজ্ঞান। তাদের জন্য দ্বা›িদ্বকতা হলো তাদের পরীক্ষণগুলোর  ফলাফল ব্যাখ্যা করার উপায়, ওই পরীক্ষাগুলো না করার অজুহাত নয়। নির্দিষ্ট ঘটনাবলীর জ্ঞানের ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়ার বিকল্প নয় দ্বা›িদ্বকতার নিয়মগুলো জানা।

এটা দুঃখজনক যে তার দাবী অনুসারে এই জীববিজ্ঞানীগণ যা করেন বলে বিবৃত করেন তার রেফারেন্স তিনি কোথাও উল্লেখ করেননি। অধিকন্তু, উপরোক্ত উদ্ধৃতিটি তার দাবীর সাথে স্পষ্টত সাংঘর্ষিক, কমপক্ষে যে দাবীতে তিনি বলেন যে  লেভিন্স ও লেভোন্টিন তাদের অনুশীলনে দ্বা›িদ্বকতাতে অভিযোজিত করেছেন, নিছক তাদের ফলাফল ব্যাখ্যা করার উপায় হিসেবে নয়।

অধিকন্তু, তিনি যেভাবে প্রশ্নটিকে তৈরী করেন তাতে একটি ভ্রান্ত বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়। এটি একটি দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি অথবা পরীক্ষণের প্রশ্ন নয়, বরং সবসময় উভয়ের। একইভাবে নির্দিষ্ট ঘটনাবলীর জ্ঞানের জন্য দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি দিয়ে প্রতিস্থাপনের প্রশ্ন এখানে নয়, কারণ উভয়ই সবসময় দরকার। এইভাবে জে বি এস হ্যালডেন ষাট বছরের বেশী আগে লিখেছিলেন যে দ্বা›িদ্বক জীববিজ্ঞানকে “একমাত্র তখনি গ্রহণ করা যেতে পারে যখন এটি  বিজ্ঞানের বিকাশের উপলদ্ধির এবং সত্যিকার বৈজ্ঞানিক গবেষণা- এই উভয়ের পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রমাণ করে। এটিই সবসময়ের নিখাদ মার্কসবাদী পদ্ধতি। মার্কস সমাজ অধ্যয়নে বস্তুবাদী দ্বন্দ্বতত্ত্ব বিকশিত করতে যেয়ে কখনো শ্রমসাধ্য গবেষণামূলক কাজ পরিত্যাগ করেননি। বিপরীতক্রমে এ ধরনের কাজ প্রথমত তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কেই তথ্য দেয় না সাথে সাথে এটিকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করে।

দ্বানাদ্বিকতার তিনটি “নিয়ম”

এঙ্গেলস দাবী করেন যে প্রকৃতিতে পরিবর্তনসমূহের প্যাটার্ন আত্মস্থ করা যায় প্রধানত দ্বান্দ্বিকতার তিনটি “নিয়ম” দিয়ে: পরিমাণগত রূপান্তর থেকে গুণগত রূপান্তর এবং এর বিপরীত ক্রম; বিপরীতসমূহের আন্তর্ব্যাপনের নিয়ম (law of interpenetration of opposites); এবং নেতির নেতিকরণ নিয়ম (law of the negation of the negation)।

আমি যুক্তি দিয়েছি সমাজে প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঐকমত্য রয়েছে যে একটি দ্ব›দ্ব (ফরধষবপঃরপ) কি কি উপাদান দিয়ে গঠিত, অর্থাৎ দুনিয়াটাকে দেখত হবে একটি সমগ্র হিসেবে যা পরিবর্তনের একটি ধ্রুব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনটি সংঘটিত হচ্ছে  দ্বন্দ্বের মেরুসমূহের বিরোধীতার ফসল হিসেবে (as a result of opposition between the poles of contradiction)। যাহোক, প্রকৃতিতে কেবলমাত্র দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়াসমূহই কাজ করে কিনা, নাকি দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিও এর গবেষণায় প্রয়োগ করা যেতে পারে- এ ব্যাপারে তাৎপর্যপূর্ণ মতভেদ রয়েছে। রয়োল যেমনটি লক্ষ্য করেন, “দ্বিধার আংশিক কারণ হলো এঙ্গেলস কর্র্তৃক দ্বান্দ্বিকতার তিনটি নিয়মের সূত্রায়ন”। এই আলোকে নিয়মগুলো সম্পর্কে তিনটি সীমাবদ্ধতা (caveats) লক্ষ্য করা দরকার।

প্রথমত আমি যুক্তি দিচ্ছিলাম যে দ্বান্দ্বিকতা ধারণ করে যে দুনিয়াটা, তাকে বুঝতে হবে একটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল সমগ্র হিসেবে যা চালিত হয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসমূহ (contradictions) দিয়ে। এবং এই নিয়ম তিনটিকে  বুঝা উচিত এই বৃহত্তর ধারণার ভেতর দিয়ে। এটা স্পষ্ট করতে হবে যে সমগ্রতা, পরিবর্তন ও দ্বন্দ্বের ধারণাবলী (the notions of totality, change and contradiction) থেকে পৃথকভাবে তিনটি নিয়মের গুরুত্ব বা অগুরুত্বকে পরীক্ষা করা ভুল হবে।

দ্বিতীয়ত যদিও এঙ্গেলস লেখেন যে এই নিয়মগুলো হলো ঐতিহাসিক বিকাশের সবথেকে সাধারণ নিয়মবালী, এই দাবী বেশ জোরালো। কিন্তু হেগেলও মনে করতেন না যে এই নিয়মগুলোই ছিল দ্বা›িদ্বক বিকাশের একমাত্র ধরন। বরং এই নিয়মগুলোর কাজ করা উচিত ধরনগুলোর কেজো অভিজ্ঞান হিসেবে যাতে দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্বগুলো (dialectical contradictions) কখনো কখনো নিজেরাই কাজ সম্পন্ন করতে পারে।

তৃতীয়ত আমাদের সতর্ক হতে হবে কীভাবে আমরা “সূত্রাবলী”র ধারণা বুঝি। ঊনিশ শতকে অনেক কথা হয়েছিল প্রকৃতি ও সমাজের বৈজ্ঞানিক “সূত্রগুলো” সম্পর্কে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কস ক্যাপিটাল-এ ঘোষণা দেন যে তাঁর চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো “আধুনিক সমাজের গতির অর্থনৈতিক সূত্র উম্মোচন করা। যাহোক, যদি “সূত্রাবলী”-কে ব্যতিক্রমহীন সার্বজনীন সাধারণীকরণ বলে গণ্য করা হয় যা অপরিহার্যরূপে করা হয় (যদিও নিঃসন্দেহে এই অর্থে যে যথাযথভাবে কেউ স্পষ্ট করতে সক্ষম হয়নি ), তখন এটা মনে হয় যে জীববিজ্ঞানে এরকম কোনো সূত্রাবলী নাই। কখনো কখনো এটা মনে করা হয় (উদাহরণস্বরূপ আলেকজান্ডার রোজেনবার্গ দেখুন) যে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের সাথে জীববিজ্ঞানের বৈসাদৃশ্য দেখা যায় এই প্রেক্ষাপটে। যাহোক, এই বৈজ্ঞানিক ডোমেইনগুলোর চিত্র সত্তা হিসেবে এক (as being ones) যাতে বিশেষায়িত অসংখ্য ঘটনা বিন্যস্ত থাকে ব্যতিক্রমীতার সূত্রগুলো (exceptionalness laws) দিয়ে, এ বিষয়টি ভুলও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ন্যান্সি কার্টরাইট যুক্তি দেন যে এই চিত্রটি নির্ভর করে ডোমেইনগুলোর অতি সরলীকরণ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। এখানে আমার সুপারিশ হলো যে দ্বন্দ্বের তিনটি “সূত্র” বাস্তবিকই “সূত্র” কিনা এবং প্রকৃতি সম্পর্কে দাবীকৃত সাধারণীকরণ হিসেবে তাদের নেয়া উচিত কিনা, এই প্রশ্নটি আমাদের এক পাশে রাখা উচিত।

রয়োল লিখেন যে “ দ্বান্দ্বিকতার একটি মৃদু সংস্করণ অনুসরণ করার জন্য দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানীদের সবাইকে অভিযুক্ত করা যেতে পারে। তারা দ্বান্দ্বিকতার কুখ্যাত তিনটি সূত্রকে বিশদভাবে বিবেচনায় নেননি।” প্রথম বিষয় যেটা আমি মনে করি যদি কেউ একজন দ্বান্দ্বিকতার তিনটি “সূত্র”কে বিশদভাবে বিবেচনায় না নেয় তবে তাদের কোনভাবে “দ্বান্দ্বিক বেকুফ”(“dialectical softies”) বলে মনে করা ভুল। মানুষজনকে এভাবে লেবেল করে দ্বা›িদ্বকতার প্রতি একটা ভ্রান্ত ধারণা দেয়া হয়। আমি যেমনটা যুক্তি দিয়ে থাকি, আঙ্গিকসমূহের দরকারী অনুস্মারক হিসেবে “সূত্র” তিনটির সেবা করা উচিত, যাতে দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্বসমূহ (dialectical contradictions) কখনো সখনো নিজেরা কাজ করতে পারে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্বসমূহ দিয়ে পরিচালিত নিয়ত পরিবর্তনশীল সমগ্র হিসেবে বিশ্বকে দেখার কাঠামোর (framework) মধ্যে সেগুলোকে অবশ্যি প্রয়োগ করতে হবে। যেমনটি রয়োল লক্ষ্য করে, “সূত্র” তিনটি “কুখ্যাত”, এবং অনভিপ্রেত বিতর্ক পরিহার করতে সেগুলো উল্লেখ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকতে পারে। সবশেষে, যেহেতু এটা সত্য যে উদাহরণস্বরূপ, লেভিনস ও লেভোন্টিন বিশদে তিনটি সূত্রের উল্লেখ করেননি, এটি যাহোক এই পয়েন্টটি যেমন তাদের অনুশীলন ও তত্ত্বগুলো কি করেছিলো তা অনুভব করতে ব্যর্থ হয়। সূত্রগুলোর কুখ্যাত বৈশিষ্ট্যের জন্য আমি মনে করি তাদের আরো বিশদে বিবেচনা করা দরকার।

পরিমাণগত পরিবর্তনের গুণগত পরিবর্তনে রূপান্তর, এবং তদ্বিপরীত, এটা এই দাবীকে উল্লেখ করে যে পরিমানগত পরিবর্তনের সঞ্চয়ন, যদিও অত্যাবশ্যকীয়ভাবে নয়, একটা পর্যায়ে গুনগত পরিবর্তন সংঘটিত করে। লেভিন্স ও লেভোন্টিন পরিবর্তনের একই প্যাটার্নের রূপরেখা দেন। তাঁরা লক্ষ্য করেন দ্বান্দ্বিকতা ধারণ করে যে- সিস্টেমসমূহ পরিবর্তনের নিত্য অবস্থায় বিদ্যমান থাকে এবং একটি সিস্টেমের স্থায়ীত্ব বা টিকে থাকা নির্ভর করে ধণাত্মক ও ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়াসমূহের (feedbacks) নির্দিষ্ট ভারসাম্যের ওপর এবং নিয়ামকসমূহের ওপর যেগুলো কিছু সীমার মধ্যে প্রক্রিয়াসমূহের হার নিয়ন্ত্রণ করে। যাহোক, তাঁরা যুক্তি দেন:

অবশেষে কিছু নিয়ামক সীমা (threshold) অতিক্রম করবে যার বাইরে আদি সিস্টেমটি যেমনটি ছিল সেভাবে আর অস্তিত্বমান থাকে না। ভারসাম্যটি ভেঙ্গে যায়। সিস্টেমটি ব্যাপক উঠা-নামা করে এবং ভেঙ্গে পড়ে, অথবা অংশগুলো যাদের তাৎপর্য বিদ্যমান কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সমগ্রের মধ্যে, সেগুলো অংশ হিসেবে তাদের সত্তা হারিয়ে ফেলতে পারে এবং একটি গুণগতভাবে নয়া সিস্টেমের জন্ম হয়।

উদাহরণস্বরূপ, লেভিনস ও লেভোন্টিন পূর্বোল্লেখিত শিকারি-শিকার “সিস্টেমসমূহকে বিবেচনা করেন। এধরনের সিস্টেমসমূহ সাম্যাবস্থায় হয়তো বিদ্যমান থাকতে পারে, কিন্তু শিকারির ছোট মাপের বাছবিচার (avoidance) কোন এক পর্যায়ে বড় মাপের পরিবর্তন সংঘটিত করে যেমন শিকারিদের শিকার ধরার অসামর্থে নাটকীয় ফলাফল হতে পারে শিকারির বেচে থাকার সুযোগে। বিকল্পভাবে, শিকারির শিকার করার সক্ষমতা শিকারের বেচে থাকার নিয়ামক সীমা অতিক্রম করলে শিকার ও শিকারি উভয়ই বিলুপ্ত  হয়ে যেতে পারে। সংক্ষেপে, “আপাত সুস্থিতির ভেতরে পরিমানগত পরিবর্তন নিয়ামক সীমা অতিক্রম করলে গুনগত আচরণে রূপান্তরিত হয়”। এখানে এটা মনে হয় জীববিজ্ঞান থেকে একটি উদাহরণ যেখানে একটা কিছু এঙ্গেলসের প্রথম “সূত্র”কে সত্য বলে ধারণ করে তার সদৃশ: তাহলো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর পরে পরিমাণগত পরিবর্তন গুণগত পরিবর্তনে পরিণত হতে পারে।

রয়োল নেতির নেতিকরণ ব্যাখ্যা দিতে একটি প্রচলিত উদাহরণ ব্যবহার করেন। তিনি লেখেন যে: “যখন একটি মুরগীর বাচ্চা ডিম থেকে ফোটে, তখন এটি ঐ ডিমকে ধ্বংস করে, অর্থাৎ এটাকে নেতিকৃত করে। কিন্তু যখন এটি বেড়ে মুরগীতে পরিণত হয় তখন তা মুরগীর বাচ্চাকে নেতিকৃত করে, সুতরাং এটি হলো নেতির নেতিকরণ”। যাহোক, তিনি আয়ান বায়ারচিলের সাথে একমত পোষণ করেন যে “বিপ্লব সংঘটিত করা বরং মুরগীর বাচ্চা প্রজননের চেয়ে অধিকতর জটিল”। পরবর্তীকালে নেতির নেতিকরণ ব্যাখ্যা করতে রয়োল বরং বিবেচনা করেন ক্রিসটফ নাইয়েরস(Christof Niehrs)এর একটি অধিকতর জটিল জীববৈজ্ঞানিক উদাহরণ: ভ্রুণীয় আরোহ (embryonic induction)।

ভ্রুণীয় আরোহ হলো বিকাশের কেন্দ্রীয় কৌশল। মোটামুটিভাবে, এটাকে ভাবা যেতে পারে ভ্রুণ-জননের (embryogenesis) সময় একটি কোষ গ্রুপের (inducer) প্রতিবেশী কোষ গ্রুপের (nduced) ওপর প্রভাব। ভ্রুণ-জনন প্রক্রিয়াতে ভ্রুণ গঠিত হয় এবং বিকশিত হয়। রয়োল নাইয়েরসের ভ্রুণীয় আরোহের উদাহরণটি লিখেছেন:

ভ্রুণের একপাশের কোষগুলো থেকে মোরফোজেনস নামক রাসায়নিকগুলো নিঃসৃত হয়। মেরুদন্ডী প্রাণীসমূহে এই পাশটা বিকশিত হয়ে একটা পাশে পরিণত হবে যাতে মেরুদন্ড থাকে (the dorsal side)। এগুলো তখন বিপরীত প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন কেমিক্যালস নিঃসরণের সূত্রপাত করে (এটি নেতিকৃত করে)। এগুলো পালাক্রমে ডোরসাল সাইডে নেতিকৃত হয়। এটি হলো প্রাণিজগতের বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলোর মধ্যে একটি। এটি যে প্রক্রিয়া শুরু করে তা  সমসত্ত¡ কোষসমূহের স্তুপগঠনের পরিবর্তে বরং অবশেষে একটি প্রাণির গঠনের দিকে ধাবিত হয় যাতে একটি মাথা প্রান্ত ও একটি লেজ প্রান্ত থাকে। এবং এটি কদাচিৎ নেতির নেতিকরণের অধিকতর সদৃশ হতে পারে।

প্রতিউত্তরে, আমি তিনটি পয়েন্টে আগ্রহ পোষণ করি। প্রথমটি হলো: ভ্রণীয় আরোহ বিপরীতসমূহের আন্তর্ব্যাপন (interpenetration of opposites) প্রদর্শন করে, নাইয়েরসএর এই দাবী সত্ত্বেও দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানের উপযোগী গঠন ও শিকার-শিকারী সম্পর্কের দৃষ্টান্তগুলোতে শনাক্তকৃত বিরোধগুলোর সদৃশ কোনো বিরোধ আমি তাতে দেখি না। জীব-সত্তাসমূহ ও তাদের বাস্তুতান্ত্রিক উপযোগী স্থানগুলোর (ecological niches) মধ্যকার অথবা শিকারি-শিকার সম্পর্কসমূহের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্য আছে এ রকম কোনোকিছুই আমি দেখি না।

দ্বিতীয়, আমি নাইয়েরস এর এই যুক্তিতে আস্থাশীল নই যে ভ্রƒণীয় আরোহ হলো দ্বা›িদ্বক পরিবর্তনের একটি উদাহরণ। যখন এটা স্পষ্ট যে ভ্রুণীয় আরোহ পরিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট, কিন্তু সব বিকাশীয় পরিবর্তন সামগ্রিকভাবে এর অব্যবহিত পরিবেশের ওপর এতটা নির্ভরশীল নয়। এমনকি তিনি যে উদাহরণ উদ্ধৃত করেন তাতে ডোরসাল ব্লাস্টোপোর লিপও (dorsal blastopore lip) অপ্রভাবিত থাকে এর transplantation   দিয়ে যাতে ভ্রুণ “দুটি পার্শ্ব” বিকশিত করে। অধিকতর সাধারণভাবে, যখন কিছু কোষ totipotent থাকে যেমন স্টেম কোষগুলো, এগুলো যেকোনো কোষে বিশেষায়িত হতে সমর্থ হয়। অন্যান্য কোষ অধিকতর সীমাবদ্ধ কার্যকরতা প্রদর্শন করে, এই কোষগুলো unipoten, এগুলো কেবলমাত্র একপ্রকারের কোষে বিশেষায়িত হতে সমর্থ।

তৃতীয়তঃ, নাইয়েরস মনে হয় দ্বান্দ্বিকতায় তিনটি “নিয়ম”-এর অবস্থান সম্পর্কে বিভ্রান্ত। আমি উপরে যেমনটি যুক্তি দিয়েছি যে আঙ্গিকসমূহের দরকারি অভিজ্ঞান হিসেবে নিয়ম তিনটির সেবা করা উচিত যাতে দ্বান্দ্বিক দ্বন্দ্বসমূহ (dialectical contradictions) কখনও কখনও নিজেরাই কাজ সম্পন্ন করতে পারে। অন্যভাবে এটা দেখা যাক, তিনটি নিয়মকে আমাদের দেখা উচিত দ্বান্দ্বিক পরিবর্তনের প্যাটার্নের উদাহরণ হিসেবে যা সংঘটিত হতে পারে সমগ্রে ( অথবা সমষ্টিতে), পরিবর্তনটি হবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসমূহের ফসল হিসেবে। নাইয়েরস তিনটি “নিয়ম”-এর উপর বেশী গুরুত্বারোপ করেন কিন্তু সমগ্রতা, পরিবর্তন ও দ্বন্দ্বের ব্যাপক দ্বান্দ্বিক তত্ত্বের ওপর তা করেননি।

সংক্ষেপে, রয়োলের বিপরীতে আমি মনে করি না যে ভ্রুণীয় অবরোহ নেতির নেতিকরণের একটি জীববৈজ্ঞানিক দৃষ্টান্ত। অধিকন্তু, জীববিজ্ঞানে নেতির নেতিকরণ কাজ করে এরকম কোন উদাহরণ আমি জানি না।

চুড়ান্তভাবে, আমি যুক্তি দিতে চাই যে নেতির নেতিকরণ হলো প্রকৃতপক্ষে সিস্টেমগুলো সম্পর্কে এবং মুরগীর বাচ্চা জন্ম দেয়া বা ভ্রুণীয় অবরোহের মত ব্যক্তিগত ঘটনা বা প্রক্রিয়া সম্পর্কে নয়। এটাকে ভাবা উচিত এই দাবী হিসেবে যে প্রত্যেক সিস্টেমের নিজের থেকে অন্য একটা সিস্টেম তৈরীর প্রবণতা রয়েছে যা এটার নিজ থেকে পৃথক; তারপর এই “নেতিকরণ আবার নেতিকৃত হয় একটি সিস্টেম তৈরী করতে যা গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে প্রথমটির পুনরাবৃত্তি, কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্যসমূহ ধারণ করে। পুঁজি থেকে  নেয়া পরবর্তী উদাহরণটি এই পয়েন্টটি বুঝতে সহায়তা করবে। যদি শ্রমিক শ্রেণী পুঁজিপতি শ্রেণীর ওপর বিজয় লাভ করে তবে আমাদের প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোতে সরল প্রত্যাবর্তন প্রত্যাশা করা উচিত নয়। বরং আমাদের প্রত্যাশা করা উচিত সমাজের একটি নয়ারূপ, সমাজতন্ত্র, যা এটির পূর্ববর্তী সমাজ থেকে পৃথক এবং এটিকে গঠন করে যে দুটি শ্রেণী তা থেকেও পৃথক। তা সত্তে¡ও, সামাজিক সংগঠনের একটি নয়া রূপ গঠিত হবে পুঁজিতন্ত্রের অধীনে বিকশিত উৎপাদিকা শক্তিসমূহ দ্বারা এবং একটি সফল বিপ্লব দিয়ে সৃজিত রাজনৈতিক চেতনা দ্বারা।

যদিও পরিমানের গুণে রূপান্তর এবং নেতির নেতিকরণকে ভাবা যেতে পারে পরিবর্তনের প্যাটার্নরূপে যা ডায়ালেকটিক নিতে পারে, কিন্তু এটা বিপরীতসমূহের পারস্পরিক আন্তর্ব্যাপনের (interpenetration of opposites) ক্ষেত্রে নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিপরীতসমূহের পারস্পরিক আন্তর্ব্যাপন ডায়ালেকটিক কৃত পরিবর্তনের কোনো প্যাটার্ন নয়, বরং এটি স্বয়ং ডায়ালেকটিকের একটি অংশ।  আরো যথাযথভাবে, যেমনটি উপরে লক্ষ্য করা গেছে, দ্বন্দ্বের তিনটি উপাদানের প্রথমটি হলো বিপরীতসমূহের পারস্পরিক আন্তর্ব্যাপন, যেমন দ্বন্দ্বসমূহ গঠিত হয় বিপরীতসমূহ দিয়ে। অধিকন্তু, এটি ডায়ালেকটিকের একটি উপাদান, যা আমি ইতোমধ্যে দেখিয়েছি যে লেভিন্স ও লেভোন্টিনের চিন্তা ধারণ করে।


অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতি হিসেবে দ্বান্দ্বিকতা (Dialectics as a heuristic)

আমি দাবী করেছি যে জৈব বিশ্ব (the biological world) ঠিক যেমন তেমনটি দেখানোর দাবী করলেই চলবে না দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানকে, সাথে সাথে পদ্ধতি সম্পর্কেও দাবী করতে হবে। এই জৈব বিশ্বকে উপলব্ধি করতে সেই পদ্ধতিকে নিয়োজিত করা উচিত। এই দ্বিতীয় দাবী উপলব্ধি করতে একটি উপায় ধারণ করে যে দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানকে ভাবা উচিত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের একটি পদ্ধতি হিসেবে, সফল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। ঊনিশ শতকের অধিকাংশ সময়ে এবং বিশ শতকের প্রথমাংশে যে দৃষ্টিভঙ্গিটি ব্যাপক মাত্রায় বিস্তৃত ছিল তাহ’ল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে গভীরভাবে জড়িত থাকে কিছু অবিশ্লেষণীয় সৃজনিক কর্ম। যাহোক, বিশ শতক এগুতে থাকলে আবিষ্কারের বিকল্প ধারণার উত্থান ঘটে। একটিতে গুরুত্বারোপ করা হয় যে আবিষ্কার একটি প্রক্রিয়া যাতে যুক্তিবিচার ((reasoning) অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং যাতে নয়া অন্তর্দৃষ্টিসমূহ শিল্পায়িত (articulated) হয় এবং আরো বিকশিত হয়। অধিকন্তু, এটা মনে করা হতো যে ঐ যুক্তিবিচারের ছিল কিছু পদ্ধতিগত অথবা আনুষ্ঠানিক দিক যা আবিষ্কারের “যুক্তি” ((logic)-এর সমার্থক ছিল।

যখন অনেকে একমত ছিলেন যে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার স) মনে করি সম্ভাবনাসমূহের স্পেইসের মধ্য দিয়েম্পর্কে নিয়মাবলী ((rules) থাকতে পারে, তখন কিন্তু এটা মনে হতে পারে না যে এক সেট প্রতিজ্ঞায় আরোহ অথবা অবরোহ যুক্তি প্রয়োগের প্রক্রিয়ার সমার্থক হতে পারে এ ধরনের নিয়ম। বরং তার পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নিয়মাবলীকে ধরা যেতে পারে অনুসন্ধানমূলক নীতি (heuristic principles) হিসেবে, যেখানে নিশ্চিত জ্ঞানের দিকে পথ দেখাতে এ ধরনের নীতি উপলব্ধি করা হয় না: তারা প্রদর্শনকারীর চেয়ে বরং চিন্তা-সঞ্চারক। এটা আমার দাবী যে দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞানকে ভাবা উচিত একটি অনুসন্ধানমূলক ডিভাইস হিসেবে।

যদি আমরা সমস্যা-সমাধানকে (problem-solving) মনে করি সম্ভাবনাসমূহের স্পেইসের মধ্য দিয়ে অন্বেষণ হিসেবে, তখন একটি এ্যালগোরিদম সম্ভাবনাসমূহের সমগ্র স্পেইসের মধ্য দিয়ে অন্বেষণ করে, অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ (exhaustive)। যদিও এ্যালগোরিদম সঠিক সমাধানের নিশ্চয়তা দেবে, প্রায়ই যখন আমরা বিকল্পসমূহের মধ্য থেকে বাছাই করি আমরা নির্ভর করি অসম্পূর্ণ তথ্য ও সীমিত উৎসের ওপর। ফলে, সমস্যা-সমাধান সম্পূর্ণ হতে পারে না। যে অন্বেষণ আমরা পরিচালনা করি তা মাঝপথে সীমাবদ্ধ হয়, যেটির একটি কার্যকর পদ্ধতি হওয়ার অনুমোদন ছিল, এমনকি অন্বেষণের কার্যকারিতার মূল্যেও না। বরং আমরা অবশ্যি অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতিসমূহের ওপর ভরসা রাখবো সম্ভাবনাসমূহের বৃক্ষকে কেটে সাফ করার জন্য। অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতিসমূহের রয়েছে বেশকিছু বৈশিষ্ট্য। প্রথমে, তারা কমপিউটেশন অথবা দৃষ্টিভঙ্গির জটিলতা হ্রাস করে, অর্থাৎ তারা সময়, স্মৃতি ও মনোযোগের মত উৎসসমূহের ওপর চাহিদা হ্রাস করে। দ্বিতীয়ত, অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতিসমূহের বিশ^াসযোগ্যতা যথেষ্ট পরিবর্তিত হবে ডোমেইনসমূহের মধ্যে। তৃতীয়ত, অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতিসমূহ কখনো ব্যর্থ হবে সমাধানে পৌঁছতে অথবা তৈরী করবে বেঠিক সমাধানসমূহ।

আবিষ্কারের অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতির একটি উদাহরণ হলো আলবার্ট আইনস্টাইনের একটি প্রবন্ধ। ১৯০৫এ প্রকাশিত এই প্রবন্ধটির শিরোনাম হলো “On a Heuristic Point of View Concerning the Production and Transformation of Light"।  তিনি সুপারিশ করেন যে আলোকে অবিচ্ছিন্ন তরঙ্গ হিসেবে গণ্য না করে বরং সসীম সংখ্যক শক্তি কোয়ান্টা দিয়ে গঠিত হিসেবে গণ্য করা কিছু উদ্দেশ্যের জন্য কেজো হতে পারে। এই কোয়ান্টাগুলো স্পেইসে পয়েন্টেগুলোতে স্থানীয়কৃত, বিভাজিত না হয়ে চলাচল করে, এবং শোষিত বা বিকিরিত হতে পারে কেবলমাত্র সমগ্ররূপে। বিশেষ করে, তিনি মনে করতেন যে ফটো-আয়নিকরণ এবং ফটো-ইলেকট্রিক প্রভাবের মত প্রপঞ্চের উপলদ্ধিতে এই আলোর কোয়ান্টা সমাধান-সূত্র দিতে পারে। যেমনটি তিনি নিজেই যুক্তি দেন, একটি তত্ত্ব হিসেবে এই হাইপোথিসিসের বিকাশ না ঘটিয়ে বরং  একটি “অনুসন্ধানমূলক দৃষ্টিভঙ্গি” হিসেবে বিকাশ ঘটানো হয় এই আশায় যে দৃষ্টিকোণটি “কেজো প্রমাণিত হতে পারে কিছু গবেষকের নিকট তাঁদের অনুসন্ধানে।

 এখানে আমার যুক্তি এই যে দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্গত সমগ্রতা, পরিবর্তন ও দ্বন্দ্ব একবার বিজ্ঞানীর অনুশীলনে প্রোথিত হলে তারা সুপারিশ করে নয়া তাত্ত্বিক উপমাসমূহ ও ধারণাবলী (theoretical metaphors and concepts)। এভাবে আমি ধারণা করি যে লেভোন্টিনের দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উপযোগী গঠনের আবিষ্কারে। এটা বিশ‌্বাসযোগ্য মনে হয় যে অভিযোজনের উপমার যুক্তি হলো এই যে উপযোগী স্থানগুলো (niches) অনড় টেমপ্লেট যাতে জীবসত্তাগুলো অবশ্যি খাপ খাইয়ে নেবে, এটি তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। আর তিনি গঠনের উপমা গ্রহণ করেন যেখানে জীবসত্তাগুলো উপযোগী স্থানগুলো নির্মাণ করে তা তারা ভরাট করে, এটি অংশত আসে দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যা গুরুত্বারোপ করে দুনিয়ার সদা-পরিবর্তনশীল প্রকৃতি এবং কার্যকারণসম্বন্ধের পারস্পরিক প্রকৃতির ওপর। উপরে যেমনটি লক্ষ্য করেছি, লেভোন্টিন নিজেই ধারণ করেন যে: “জীবসত্তা ও পরিবেশ দ্বান্দ্বিভাবে সম্পর্কিত।

মার্কস ও এঙ্গেলসের কাজের ওপর ব্যাপকভাবে ভর করে আমি দ্বান্দ্বিকতার  ব্যাখ্যাতে এভাবে যুক্তি দিয়েছি যে দুনিয়াকে অবশ্যি দেখতে হবে একটি সমগ্র হিসেবে যেটি পরিবর্তনের একটি স্থায়ী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় যেখানে এই পরিবর্তনটি হলো একটি দ্বন্দ্বের দু’টি মেরুর বিরোধীতার ফসল। অধিকন্তু, দ্বন্দ্বের ধারণায় অন্তর্ভূক্ত বিপরীতসমূহ অস্তিত্বগতভাবে একে অপরকে পূর্বেই মেনে নেয় এবং তাদের মধ্যকার ফিডব্যাক মেকানিজম একে অপরের ওপর প্রভাব ফেলে। যাহোক, আমি আরো যুক্তি দিয়েছিলাম যে দ্বান্দ্বিকতার তথাকথিত তিনটি “নিয়ম” সংক্রান্ত এঙ্গেলসের কিছু দাবী খুবই জোরালো ছিল। আমি যুক্তি দিয়ে যাচ্ছিলাম যে জীববিজ্ঞানে ডায়ালেকটিক কাজ করে, কমপক্ষে কিছু সময়, এবং উপযোগী গঠন আর শিকারী-শিকার মিথষ্ক্রিয়া হলো কার্যকারণ সম্বন্ধীয় পারস্পরিক প্যাটার্নের স্পষ্ট উদাহরণ, অর্থাৎ দুনিয়াতে দ্বান্দ্বিক প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। সম্ভবত আমার বর্ণনার সবচেয়ে স্বাতন্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো এই যুক্তি যে দ্বান্দ্বিক জীববিজ্ঞান ও দ্বান্দ্বিকতা অধিকতর সাধারণভাবে অংশত উপলব্ধি করা উচিত অনুসন্ধানমূলক ডিভাইস হিসেবে- একটি ডিভাইস যা আমাদের দুনিয়াটাকে উপলদ্ধি করতে অনুমোদন দেয়, জ্ঞানের নিশ্চয়তা হিসেবে নয় বরং উপলব্ধির জন্য একটি কেজো পথপ্রদর্শক হিসেবে।


যদিও তাঁর জীবনের এই পর্যায়ে মার্কস লিখছিলেন উচ্চতর দার্শনিক ভাষায় হেগেল কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে, কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ন অন্তর্দৃষ্টিগুলো ছিলো সহজ। মার্কস বিশ্বাস করতেন যে পুঁজিতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থিতির অর্থ হলো এই যে তারাই একমাত্র শ্রেণী যারা পুঁজিতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে উৎখাতে সমর্থ, এবং, তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ইতিহাসের প্রথম শ্রেণী যারা শ্রেণী-বিভাজন (এবং সুতরাং শোষণ ও পরকীকরণ) একত্রে উৎখাতে সমর্থ। জনগণের অন্য শ্রেণীর মত পৃথক, শ্রমিক শ্রেণীর পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো সুনির্দিষ্ট স্বার্থ নেই। এর অর্থ এই যে তাদের সংগ্রামগুলো সমগ্র সিস্টেমের বিরুদ্ধে সংগ্রামের রূপ লাভ করতে পারে, এটির কেবল একটি দিকের বিরুদ্ধে নয়।

অধিকন্তু, পুঁজিতন্ত্রের মধ্যে শ্রমিক শ্রেণীর বিশাল ক্ষমতা বিদ্যমান। যদি তারা কাজ বন্ধ করে দেয়, সিস্টেমটি থেমে যাবে এবং পুঁজিতন্ত্রীরা তখন মুনাফাকরণ চালিয়ে যেতে অসমর্থ হবে। অধিকন্তু,কীভাবে অর্থনীতি সংহত হয়েছে তার কারণে শ্রমিকদের ক্ষুদ্রতর, নির্দিষ্ট গোষ্ঠীগুলো বিশেষভাবে ক্ষমতাশালী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি পরিবহন শ্রমিকগণ ধর্মঘটে যায়, এটি কেবলমাত্র পরিবর্তন মালিকদেরই আঘাত করবে না, বরং অনেক পুঁজিতন্ত্রীদেরও আঘাত করবে। সুতরাং শ্রমিক শ্রেণী কৌশলগতভাবে ব্যাপকমাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ, অন্য শোষিত বা নিপীড়িত গোষ্ঠীগুলোর থেকে বেশী। কারণ পুঁজিতন্ত্র গড়তে তারা অপরিহার্য, এটাকে ভাঙ্গতেও তারা অপরিহার্য।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্ব স ম আজাদ

পরকীকরণ: মার্কসের তত্ত্বের ভূমিকা

রসায়নের প্রকৃতি এরিক শেরি