ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্ব স ম আজাদ
ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্ব
আমরা যখন অবস্থান্তর ধাতু এবং এর সন্নিবেশ যৌগের কথা বলি তখন আমাদের d অরবিটালের কথাও বলতে হয়। এজন্য d অরবিটাল সম্পর্কে আমাদের ধারণা কিছুটা ঝালাই করে নিতে হয়।
আমাদের d অরবিটালগুলোর নাম জানতে হবে। আমাদের d অরবিটালগুলো আঁকতে শিখতে হবে। দেখা যাক d অরবিটালগুলো দেখতে কেমন।এখানে আমরা একই রেফারেন্স ফ্রেম ব্যবহার করবো। z-অক্ষ হবে উপর-নীচ বরাবর, y-অক্ষ হবে আনুভূমিক, x-অক্ষ এই তল থেকে বের হবে এবং তলের ভিতর দিকে যাবে।আমরা সবসময় এই একই বয়ান ব্যবহার করবো।
আমাদের বিবেচনাকৃত প্রথম d অরবিটাল হ’ল dz2, এর সর্বাধিক ইলেকট্রন ঘনত্ব z-অক্ষ বরাবর অর্থাৎ এই অক্ষ বরাবর দু’টি লোব বিদ্যমান এবং xy তলে ছোট্ট ডোনাট বিদ্যমান। dx2-y2 অরবিটালের সর্বাধিক বিস্তার x-অক্ষ ও y-অক্ষ বরাবর, অর্থাৎ এই নির্দিষ্ট অরবিটালের জন্য সরাসরি অক্ষের ওপর (on-axis)
পরবর্তী তিনটি d অরবিটালে সর্বাধিক বিস্তার অক্ষের বাইরে (off-axis), সুতরাং তারা অক্ষের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। তারা, প্রকৃতপক্ষে, অক্ষ থেকে 45° বাইরে (45° off-axis)। এই অরবিটালগুলো হ’ল dxy dyz dzx।
ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্বের সাথে d অরবিটালের আকারের সম্পর্ক বিদ্যমান।এছাড়া আর একটি তত্ত্ব হ’ল লিগান্ড ফিল্ড তত্ত্ব। এই তত্ত্বগুলোর বিকাশ হয়েছে পরীক্ষায় পাওয়া তথ্য ব্যাখ্যার জন্য। সন্নিবেশ যৌগগুলোর বিশেষ ধর্ম আছে, এদের অণুতে অবস্থান্তর ধাতু মধ্যে থাকে, আর এর চারপাশে লিগান্ড থাকে। এই বিশেষ ধর্মের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যার জন্যই এই তত্ত্ব দু’টি।
এই তত্ত্ব দু’টির পেছনে মৌল ধারণা হ’ল এই যে সন্নিবেশ স্ফেয়ারের কেন্দ্রে যদি আমরা নির্দিষ্ট জারণ সংখ্যা বিশিষ্ট একটি ধাতু আয়ন স্থাপন করি, যেটিকে দাতা লিগান্ডগুলো পরিবেষ্টিত করে রাখে, তখন এই লিগান্ডগুলোর অবস্থান দিয়ে d অরবিটালসমূহের শক্তির পরিবর্তন সংঘটিত হয়। তারমানে d অরবিটালগুলো প্রভাবিত হয় ধাতুর চারপাশের দাতা লিগান্ড দিয়ে।কীভাবে d অরবিটালগুলো প্রভাবিত হয়, তা এই দুটি তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্য করা যায়।
ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্বের ভিত্তি হ’ল আয়নিক বয়ান (ionic description)।এটি লিগান্ডকে গণ্য করে ঋণাত্মক পয়েন্ট চার্জ হিসেবে, এটি খুব সরলীকৃত মডেল, অন্যদিকে লিগান্ড ফিল্ড তত্ত্ব বিবেচনা করে সন্নিবেশনের সমযোজী দিকের সাথে সাথে আয়নিক দিকও।এটি অধিকতর শক্তিশালী, অধিকতর ব্যবহার-উপযোগী, কিন্তু কিছুটা জটিলও।তাই এই নিবন্ধে লিগান্ড ফিল্ড তত্ত্ব আলোচনা করা হবে না। পরে সুযোগমত অন্য কোন নিবন্ধে আলোচনা করা হবে।
এখন আমরা ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করবো্।এটা সরলীকৃত মডেল হলেও প্রকৃতপক্ষে ভালই কাজ করে। সন্নিবেশ কমপ্লেক্সগুলোর অল্পকিছু ধর্ম এই সরলীকৃত মডেল দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।
ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্বে আয়নিক মিথষ্ক্রিয়া বিবেচনা করা হয়।এতে লিগান্ডকে ঋণাত্মক পয়েন্ট চার্জ হিসেবে গণ্য করা হয়। সুতরাং মৌলিক ধারণা এই যে ঋণাত্মক পয়েন্ট চার্জ হিসেবে লিগান্ডসমূহ d অরবিটালগুলোর কাছাকাছি আসলে বিকর্ষনণীয় প্রভাব দেখা যায়। চিত্র নং ৩ লক্ষ কর। এই চিত্রে একটি ধাতু আয়ন M+n দেখা যাচ্ছে, এর চারপাশে লিগান্ড বিদ্যমান।এই কমপ্লেক্স আয়নটির জ্যামিতিক গঠন কি হতে পারে? অবশ্যি অষ্টতলকীয়।কারণ আমাদের z-অক্ষ বরাবর উপরে এবং নীচে দু’টি লিগান্ড বিদ্যমান, একইভাবে y-অক্ষ বরাবর দু’টি লিগান্ড, x-অক্ষ বরাবর পেছনের দিকে এবং সামনের দিকে দু’টি লিগান্ড। তাহ’লে একই বিষয়ের আর একটা চিত্র দেখতে পাচ্ছি: মাঝখানে ধাতু, আর অ্যামোনিয়া লিগান্ডসমূহ বা এই ক্ষুদ্র ঋণাত্মক পয়েন্ট চার্জগুলো সবই অক্ষ বরাবর।অর্থাৎ আমাদের চারটি লিগান্ড ইকুইটোরিয়া্ল বরাবর, এবং একটি উপরের দিকে এবং একটি নীচের দিকে, সুতরাং এটি হ’ল অষ্টতলকীয় গঠনের। যেহেতু আমরা প্রত্যেকটি লিগান্ডকে ঋণা্ত্মক পয়েন্ট চার্জ গ্ণ্য করেছি, আর যদি এই চার্জ ঠিক d অরবিটালের দিকে নির্দেশিত থাকে (pointing toward a d orbital), তখন তা খুবই বিকর্ষণীয় (repulsive) হয়, যদি তা না হয়, তখন কম বিকর্ষণীয় হয়। এটিই হ’ল ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্বের পেছনের সামগ্রিক ধারণা।
অষ্টতলক গঠনে, d অরবিটালগুলোর চারপাশে বিদ্যমান ঋণাত্মক পয়েন্ট চার্জগুলোর অবস্থানসমূহ বিবেচনা করা যাক। যখন লিগান্ডের মত d অরবিটালের লোব অক্ষের ওপরে (on axis) থাকে তখন বেশী বিকর্ষণ ঘটে। যখন লিগান্ড অক্ষের ওপর (on axis) এবং d অরবিটালের লোব অক্ষের বাইরে (off axis, তখন বিকর্ষণ কম।এটি হ’ল ভিত্তি।
এখন একটি হাপোথেটিক্যাল ক্ষেত্র বিবেচনা করা যাক যেখানে মাঝখানে ধাতু এবং চারপাশে সবজায়গায় লিগান্ড বিদ্যমান, তখন সবগুলো d অরবিটালের শক্তি সমান, তারা সবাই ডিজেনারেট । কিন্তু বাস্তবে অষ্টতলকীয় গঠনে লিগান্ডগুলো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে, তখন এই লিগান্ডগুলোর জন্য বিভিন্ন আকারের অরবিটালের শক্তির ওপর কীভাবে প্রভাব পড়ে তা আমরা দেখতে পাবো।
আমরা জানি আমাদের লিগান্ড এবং অরবিটাল যদি অক্ষের ওপরে থাকে তাহলে তাদের মাঝে অধিকতর বিকর্ষণ হয়। সুতরাং dx2-y2 ও dz2 অরবিটালদ্বয়ের একই পরিমাণ শক্তিতে অস্থিতিকরণ ঘটে হাইপোথেটিক্যাল ক্ষেত্রের তুলনায়। কাজেই উচ্চশক্তি স্তরে তাদের শক্তিও একই থাকে, অর্থাৎ তারা ডিজেনারেট অরবিটাল।
অন্য তিনটি d অরবিটালে লোবগুলো 45° অক্ষের বাইরে থাকে, অন্যদিকে লিগান্ডগুলো অক্ষের ওপর থাকে। সুতরাং লিগান্ড ঋণাত্মক চার্জ নির্দেশিত থাকে অরবিটালগুলোর মধ্য দিয়ে (in between the orbitals), সরাসরি তাদের দিকে নয়। এই তিনটি অরবিটাল অর্থাৎ dxy, dyz, dxz অরবিটালত্রয় হাইপোথেটিক্যাল ক্ষেত্রের থেকেও স্থিতিশীল হয়।কাজেই অন্য দু’টি তুলনায় আরও বেশী স্থিতিশীল হয় এবং একই পরিমাণে, এজন্য এই তিনটি অরবিটালও ডিজেনারেট একে অপরের সাথে। এই হ’ল অষ্টতলকীয় ক্ষেত্রে ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্বের সামগ্রিক ধারণা।
এখন আমরা অষ্টতলকীয় গঠনের ক্ষেত্রে ক্রিস্টাল ফিল্ড স্প্লিটিং চিত্র দেয়া হ’ল। এই চিত্রের বাম পাশে হাইপোথেটিক্যাল ক্রিস্টাল ফিল্ডের ডিজেনারেট d অরবিটালের গড় শক্তি। ডান পার্শ্বে অষ্টতলকীয় গঠনের জন্য ক্রিস্টাল ফিল্ড স্প্লিটিং শক্তি। উপরের eg হ’ল উচ্চ শক্তির অরবিটালের সেট। নিচের t2g হ’ল নিম্ন শক্তির অরবিটালের সেট। এটি ঘটে যাতে শক্তির সংরক্ষণশীলতা বজায় থাকে। কীভাবে সংরক্ষণশীলতা থাকে সেটা দেখা যাক। সুতরাং যদি eg লেভেলে দু’টি অরবিটালের শক্তি বৃদ্ধি পায় ৩/৫ দিয়ে, আর t2g লেভেলে তিনটি অরবিটালের শক্তি হ্রাস পায় ২/৫ দিয়ে, তাহ’লে সিস্টেমের সাম্রগিক সংরক্ষণশীলতা বজায় থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন