ব্রিটিশ নিউ্ক্লিয়ার অস্ত্রভান্ডার নবায়ন এবং বিশ্ব শান্তি স ম আজাদ
ব্রিটিশ নিউক্লিয়ার অস্ত্রভান্ডার নবায়ন ও বিশ্বশান্তি
স ম আজাদ
ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী ম্যাগী থাচার ব্রিটেনে ১৯৮০ অস্ত্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। এই ব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বর্তমান অধঃপতিত যুদ্ধবাজ নিউ লেবার সরকার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন মিসাইল ব্যবস্থা গড়ে তোলা, পুরাতন নিউক্লিয়ার সাবমেরিন বদলে ফেলা এবং আগামী ৩০ বছর পর্যন্ত এই ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আনুমানিক ৭৬ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হিসেবে করেছে। এ উদ্যোগ
এমন সময়ে নেয়া হয়েছে যখন তারা ইরান ও উত্তর কোরিয়ার নিউক্লিয়ার অস্ত্র গবেষণা ও উদ্ভাবনের বিরোধীতা করছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের
সাথে সুর মিলিয়ে। মার্কিন দখলদার বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে ইরাক ও আফগানিস্তানকে ধ্বংস
করেছে ‘war
on terror’-এর অভিযানের অংশ হিসেবে।
ব্রিটিশ
যুদ্ধবিরোধী র্যাডিক্যাল একটিভিস্টরা হিসেব করে দেখিয়েছেন যে এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে
বৃহদায়তনে যে মানবিক কর্মকান্ডসমূহ পরিচালনা করা যেত তা হচ্ছে: (১) আমাদের গ্রহের ৭
মিলিয়ন একর রেইন ফরেস্ট সংরক্ষণ; (২) তৃতীয় বিশ্বের ১.৫ মিলিয়ন শিশুকে দারিদ্র্য থেকে
রক্ষাকরণ (৩) ৫ বছরের জন্য ৬০,০০০ শিক্ষক নিয়োগ দান; (৪) ৫ বছরের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের
জন্য বর্ধিত বেতন মওকুফকরণ।
বস্তুতঃ
বিশ্ব শান্তির সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি বুশ-ব্লেয়ারের নেতৃাধীন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী।
সখারাম গণেশ দেউস্কর জানিয়েছেন যে ভারত বর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ উপনিবেশিক
শাসন কালে পৌনঃপুনিক দুর্ভিক্ষে ১৮৭৫ সাল হতে ১৯০০ সাল সময়কালে ২ কোটি ৬০ লক্ষ লোক
না খেয়ে মারা গেছেন। নাইজেরিয়াতে বায়্রাফার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৯৬৭ ও ১৯৭০-এর মধ্যে।
নাইজেরিয়ার ফেডারেল সেনাবাহিনী বায়াফ্রার দিকে অগ্রসর হলে যুদ্ধ শুরু হয়। বায়াফ্রার
জনগণ অভূতপূর্ব বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। নাইজেরিয় সেনাবাহিনী বায়াফ্রা পুনর্দখল করে।
এসময় বৃহৎ শক্তিবর্গ কেবলমাত্র মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেন। আর ব্রিটিশ লেবার
প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন নাইজেরিয় সরকারকে অস্ত্রে সজ্জিত করেন এবং বায়াফ্রা অবরোধে
সহায়তা করেন। এতে ৫ লক্ষ লোক নিহত হন এবং বায়াফ্রার ২ মিলিয়ন বেসামরিক নাগরিক মৃত্যুমুখে
পতিত হন।
দ্বিতীয়
বিশ্ব যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ চালকের আসন থেকে পতিত হয় এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ
এর স্থান দখল করে। নিউক্লিয়ার অস্ত্রের অধিকারী হয়েই দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষভাগে
তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিউক্লিয়ার বোমা নিক্ষেপ করে মানবতার বিরুদ্ধে
অপরাধ সংঘটিত করেছিল। এই যুদ্ধের পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সঙ্গে
এক সভাতে ম্যানহাটান নিউক্লিয়ার অস্ত্র প্রকল্পের বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমার শোক-সন্তব্যভাবে
মন্তব্য করেন যে বিজ্ঞানীদের হাত রক্তে রঞ্জিত। আর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্টেফান হকিং খোদ
মানবজাতির অস্তিত্ব নিয়েই শংকিত। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিসমূহের মধ্যে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ সংঘটিত না হলেও কেবলমাত্র অস্ত্র ব্যবস্থাপনার ত্রুটির
কারণে এবং ভৃল সংকেতের কারণে মুহুর্তে মানবজাতির অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যেতে পারে। এজন্য
তিনি চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে বিকল্প আবাসের আপাতঃ ইউটোপিয় ধারণার কথা ভাবছেন।
বর্তমান
দুনিয়াতে সামরিক খাতে ব্যয় হয় ৯০ হাজার কোটি ডলারের বেশী। ইয়াংকি সাম্রাজ্যবাদের নিউক্লিয়ার
অস্ত্র ভান্ডারের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সম্পর্কে আনু মুহাম্মদ প্রতীকিভাবে মন্তব্য করেছিলেন
যে ব্যয়কৃত অর্থের সমপরিমাণ ১ ডলার নোটগুলো দঁড়ি পাকালে সেই দঁড়ির দৈর্ঘ্য হবে পৃথিবী
থেকে চাঁদের দূরত্বের দ্বিগুণ।
ঠান্ডা
যুদ্ধের সময়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী কমিউনিজম মোকাবিলার্ অজুহাতে অস্ত্র প্রতিযোগীতায়
লিপ্ত হয়েছিল। ১৯৮০-এর দশকে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানে অনেকে ভেবেছিলেন এবার বুঝি বিশ্বব্যাপী
অস্ত্র প্রতিযোগীতা হ্রাস পাবে। কিন্তু তার পরিবর্তে এই প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এবার যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলাকে। আসলে তাদের
ওয়ার অন টেররের পেছনে রয়েছে ঘৃণ্য মানবতা বিরোধী পুঁজিতান্ত্রিক মুনাফা লিপ্সা। এই
পুঁজিতান্ত্রিক মুনাফা লিপ্সার বিরুদ্ধে বিশ্বের শান্তিকামী জনগণের রুখে দাঁড়ানোর মধ্যেই
নিহিত আছে মানবজাতির ভবিষ্যৎ এবং আমাদের গ্রহের
নিরাপত্তা।
টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পূর্বাকাশ ২৯শে জানুয়ারি ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত, পৃ: ৩
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন