জেমস চ্যাডউইক ও নিউট্রন

 
 
 
জেমস চ্যাডউইক ও নিউট্রন 
স ম আজাদ

১৯২০এ রাদারফোর্ড তাঁর ‘নিরপেক্ষ ডাবলেট’, বা নিউট্রন বর্ণনা করেন। এই কণিকাগুলো চার্জবিহীন। কিন্তু এদের ভর প্রোটনের ভরের থেকে সামান্য বেশী। নিউট্রন চার্জবিহীন, তাই এর কোনো বৈদ্যুতিক বিকর্ষণ নেই। বস্তুর ভেতর দিয়ে প্রোটনের থেকে বেশী ভেদনযোগ্য বলে এটি সনাক্ত করা দুঃসাধ্য। দশকের অধিক গবেষণা করে চ্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করেন। ম্যানচেষ্টার থেকে ক্যামব্রীজ যাওয়ার সময় চ্যাডউইক রাদারফোর্ডের অনুগামী হন। পরে তিনি ক্যাভেন্ডিশে এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব রিসার্চ হন। পদার্থবিজ্ঞানের যেকোনো নয়া বিকাশ সম্পর্কে রাদারফোর্ডকে অবহিত করা ছিল তাঁর কাজ। চ্যাডউইক ও রাদারফোর্ড প্রায়ই নিউট্রন নিয়ে আলোচনা করতেন, এবং তা আবিষ্কারের জন্য ‘হাস্যকর’ পরীক্ষণের সুপারিশ করতেন তাঁরা। কিন্তু চ্যাডউইকের আবিষ্কারের প্রেরণা রাদারফোর্ডের পরিবর্তে ইউরোপ থেকে এসেছিল। বিশেষ করে একটি গবেষণার প্রতি তাঁর মনোযোগ আকৃষ্ট হয়: ফ্রান্সের পিয়েরে কুরি-ম্যারি কুরি দম্পতির কন্যা আইরিন জুলিও কুরি এবং তাঁর স্বামী ফেড্রেরিক জুলিও কুরি- এরা দু’জনে যৌথভাবে বেরিলিয়াম থেকে পাওয়া তখন পর্যন্ত অশনাক্তকৃত বিকিরণ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাঁরা প্যারাফিন মোমকে এই বিকিরণ দিয়ে আঘাত করেন। তাঁরা দেখলেন যে এই বিকিরণ মোমের টার্গেটের হাইড্রোজেন পরমাণুকে আঘাত করলে উচ্চ গতির প্রোটন নির্গত হয়।

জুলিও কুরি বিশ্বাস করলেন যে প্যারাফিন টার্গেটকে আঘাতকারী বিকিরণ অবশ্যি উচ্চ শক্তির গামা ফোটন হবে। কিন্তু চ্যাডইউক ভাবলেন যে  কুরি দম্পতির এই বিশ্বাস পর্যবেক্ষণের সাথে মেলে না। তিনি যুক্তি দেন যে ভর শূণ্য ফোটন টার্গেটের হাইড্রোজেন পরমাণুকে  আঘাত করে প্রোটন নির্গত করতে পারে না। ১৯৩২-এ একই ধরনের পরীক্ষণ তিনি নিজেই করলেন এবং বুঝতে পারলেন যে বেরিলিয়াম থেকে নির্গত বিকিরণ প্রকৃত পক্ষে নিরপেক্ষ কণিকার বিকিরণ এবং এর ভর প্রোটনের ভরের প্রায় সমান। প্যারাফিন মোম ছাড়াও তিনি হিলিয়াম, নাইট্রোজেন, লিথিয়াম ইত্যাদি টার্গেট দিয়েও পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষণগুলো তাঁকে নয়া কণিকার ভর নির্ণয়ে সহায়তা করে। তিনি সিদ্ধান্তে আসেন যে নয়া কণিকার ভর প্রোটনের থেকে সামান্য বেশী। তিনি আরও লক্ষ্য করেন যে নিউট্রনের চার্জ না থাকায় এটি প্রোটনের থেকে টার্গেটকে বেশী ভেদ করতে পারে।

১৯৩২-এর ফেব্রুয়ারিতে প্রায় দু’ সপ্তাহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চ্যাডউইক একটি পেপার প্রকাশ করেন, এর শিরোনাম ছিল ‘The Possible Existence of a Neutron’। পরীক্ষণ থেকে তাঁর নিকট প্রতীয়মান হয় যে  রহস্যময় বিকিরণ গামা রশ্মি ফোটন না হয়ে বরং ‍নিউট্রন হবে। তারপর কয়েক মাস পরে মে ১৯৩২-এ আরও নিশ্চিত হয়ে পূর্বের জমা দেয়া পেপারের শিরোনাম থেকে `Possible’ বাদ দিয়ে  ‘The Existence of a Proton’ শিরোনামের পেপার জমা দেন।

১৯৩৪ নাগাদ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল যে নতুন আবিষ্কৃত নিউট্রন একটি মৌলিক কণিকা, রাদারফোর্ড যে বলেছিলেন প্রোটন ও ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত কণিকা তা নয়।

নিউট্রনের আবিষ্কার পরমাণু সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেয়। ১৯৩৫-এ চ্যাডউইককে এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। বিজ্ঞানীরা শীঘ্রই বুঝতে পারেন যে নুতন আবিষ্কৃত ভারী কণিকা  নিউট্রনকে ব্যবহার করা যেতে পারে অন্য পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে রহস্যভেদ করতে। তারপর আর বেশী সময় লাগেনি ইউরেনিয়ামকে নিউট্রন দিয়ে আঘাত করে বিপুল পরিমাণ শক্তি পেতে যাতে নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরী সম্ভব হয়ে উঠে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ম্যানহ্যাটন প্রকল্পে পারমাণবিক বোমা তৈরীতে চ্যাডউইকের নিউট্রন আবিষ্কার পথ তৈরী করে দেয়। তিনি ১৯৭৪-এ মৃত্যুবরণ করেন।

 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ক্রিস্টাল ফিল্ড তত্ত্ব স ম আজাদ

পরকীকরণ: মার্কসের তত্ত্বের ভূমিকা

রসায়নের প্রকৃতি এরিক শেরি