করোনা ভাইরাস (Corona virus) সামালি জাহান সাম্য
করোনাভাইরাস (corona virus)
সামালি জাহান সাম্য
করোনাভাইরাসের নাম শুনেনি এমন লোক পৃথিবীতে পাওয়া খুবই অসম্ভব ব্যাপার। অবশ্যই আমরা সবাই করোনাভাইরাসের সাথে পরিচিত। এই ভাইরাসটির দেহে সূর্যের জ্বলন্ত তীক্ষ্ম শলাকার আলোকছটা করোনার মতো কিছু একটার সন্ধান পাওয়া গেছে বলে এর নাম দেয়া হয়েছে করোনাভাইরাস।
কী দিয়ে তৈরী:
সব ভাইরাসের মূল উপাদান প্রোটিন, DNA ও RNA। কিন্তু সব ভাইরাসেই যে DNA ও RNA দুটোই থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। করোনাভাইরাসের সব প্রজাতির জিনোম একসূত্র বিশিষ্ট RNA।
কোথা থেকে এসেছে:
এর প্রথম সংক্রমণ হয় চীনের উহান থেকে। তারপর দেশ থেকে দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেরই মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১ লক্ষের বেশী রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
লক্ষণ:
১. জ্বর
২. নিউমোনিয়া
৩. ঠান্ডা
৪. কাশি
৫. গলাব্যথা
৬. শ্বাসকষ্ট
৭. শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা
৮. পেটে জ্বালাপোড়া।
কিসের মাধ্যমে ছড়ায়:
১. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে।
২. আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে।
৩. গবাদিপশুর মাধ্যমে।
বাঁচার উপায় কী?
১. ঘন ঘন সাবান দিয়ে ভালো করে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুতে হবে।
২. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে।
৩. বাইরে গেলে মাস্ক পরিধান করতে হবে।
৪. গবাদিপশু থেকে দূরে থাকতে হবে।
৫. হাঁচিকাশির সময় কাপড়, টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
৬. হ্যান্ডশেক ও কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে হবে।
৭. সবার থেকে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।
৮. খুব বেশী জরুরী না হলে ঘন ঘন বাইরে বের হওয়া যাবে না।
৯. হাত দিয়ে চোখ, নাক, কান স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১০. সাবান বা পানির সংকট থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হ্যান্ড রাব ব্যবহার করতে হবে।
মাস্ক পড়ে লাভ আছে কী?
সাধারণ মাস্ক ধুলাবালি আটকাতে পারে ঠিকই কিন্তু ভাইরাস ঠেকাতে পারে না। ভাইরাস ঠেকানোর ক্ষেত্রে N95 রেসপিরেটর মাস্ক আংশিক সুরক্ষা দিতে পারে। এটি 0.3 মাইক্রন ব্যাসের 95% কণা বা তার চেয়ে বেশী কণা আটকাতে পারে। করোনা ভাইরাসের আকার প্রায় 0.12 মাইক্রন হলেও বাতাসে এটি 0.5 মাইক্রনের ধুলিকণা বা জলকণায় ভেসে বেড়ায় বলে N95 রেসপিরেটর মাস্ক একে ফিল্টার করতে পারে।
WHO করোনাভাইরাসকে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি ঘোষণা করল কেন?
উহান থেকে এ পর্যন্ত অনেক দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর পৃথিবীতে অর্ধেকের বেশী রোগী শনাক্ত হলে WHO একে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি ঘোষণা করল।
করোনা ভাইরাসের গঠন:
পৃথিবীর কয়েকটি দেশের আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু সংখ্যার একটি ছক দেয়া হলো:
দেশ আক্রান্ত মৃত্যু
চীন 83,293 4,634
ইতালি 237,828 34,448
স্পেন 291,763 27,136
ভারত 371,734 12,360
ফ্রান্স 158,174 29,575
ইরান 197,647 9,272
বেলজিয়াম 60,348 9,683
বাংলাদেশ 102,292 1,343
সূত্র: Worldometer
করোনাভাইরাসের প্রজাতি:
করোনাভাইরাস হলো ভাইরাসদের সপ্তম বৃহৎ প্রজাতি। এই ভাইরাসটির প্রায় ২০০টি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে ৩টি প্রজাতি মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর:
১. SARS-COV (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস)
২. MERS-COV (মিডল ইস্ট রেসপিটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস)
৩. 2019-nCOV (২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস)
মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস (MERS-COV)
এটি উট থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১২ সালে এই ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আট শতাধিকের বেশী লোক মারা যায়।
সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনাভাইরাস (SARS-COV)
বাদুড় ও বিড়াল জাতীয় প্রাণী থেকে এটি মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় ২০০২ সালে। ২০০২-২০০৩ সাল পর্যন্ত চীন ও হংকংয়ে ৬৫০ জন লোক আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
আক্রান্ত হয়েছি কিনা বুঝবো কীভাবে?
সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে 2019-nCOV-এর লক্ষণে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। মুখ-গলা পুরো শুকিয়ে যায়। জ্বর থাকতে পারে। কাশি থেকে কোনো কফ বের হয় না। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। গলাব্যথাও থাকতে পারে।
আক্রান্ত রোগীদের করণীয়:
১. মাস্ক পড়ে থাকতে হবে।
২. নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বের হওয়া যাবে না।
৩. ডাক্তারের কথা মত চলতে হবে।
৪. সময়মতো ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ সেবন করতে হবে।
৫. নিয়মিত হাত ধুতে হবে (অন্তত ৩০ সেকেন্ড ধরে)।
৬. বিশ্রাম করতে হবে।
হাত ধোয়ায় ভুল:
১. সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে শুধু পানি দিয়ে হাত ধোঁয়া।
২. হাত ধোঁয়ার সময় আঙ্গুলের ফাঁকা জায়গা ও নখের নিচের অংশ পরিষ্কার না করা।
৩. ১৫-২০ সেকেন্ডের কম সময় ধরে হাত ধোঁয়া।
কোয়ারেন্টাইন কী?
কোয়ারেন্টাইন হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজেকে পৃথক রাখা। তাই বলে এটি এই নয় যে, আপনাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়া হলো। যদি করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেখা দেয়, তাহলে নিজেকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে অন্তত ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়। এখানে অন্তত ৫-৬ জনকে রাখা যায়। এর বেশী লোক হলে সেটি আর কোয়ারেন্টাইন নয়।
আইসোলেশন কী?
আইসোলেশন হলো যখন কারোর মধ্যে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে কিংবা ধরা না পড়লেও উপসর্গ থাকে, তখন তাকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া। এই পদ্ধতিতে কোনো রোগীর ব্যবহৃত জিনিস বা হাঁচি-কাশি, ঠান্ডা অন্য কারোর সংস্পর্শে যাবে না। আইসোলেশন হলো অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য। আর কোয়ারেন্টাইন হলো সুস্থদের জন্য। অসুস্থ ব্যক্তি পুরোপুরি সেরে উঠা না পর্যন্ত তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়।
করোনাভাইরাসে দেশের অবস্থা:
করোনাভাইরাস প্রথম বাংলাদেশে ধরা পড়ে ৮ই মার্চ। প্রথম রোগীর বয়স ছিল ৭০ বছর। তারপর যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা সবাই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন। ১ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ জন। সব মিলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মারা গেলেন ১,৩৪৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪০,১৬৪ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১০২২৯২ জনের বেশী।
আমাদের যা করা উচিত:
করোনোভাইরাসের আতঙ্ক এখন সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আমাদের সবার উচিত সচেতন হওয়া। আসুন,আমরা সকলে ভয় না পেয়ে সচেতন হই এবং অন্যদের সচেতন করি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন