বিজ্ঞান ও নৈতিকতা: প্রসঙ্গ স্টেম সেল গবেষণা মূল: জন পারিঙ্গটন অনুবাদ: স ম আজাদ
বিজ্ঞান ও নৈতিকতা: প্রসঙ্গ স্টেম সেল গবেষণা
মূল: জন পারিঙ্গটন অনুবাদ: স ম আজাদ
বর্তমানে
স্টেম সেল গবেষণা বিজ্ঞানের সবচেয়ে সাড়া জাগানো এবং সবথেকে বিতর্কিত
ক্ষেত্র। এটি আবার সংবাদ শিরোনাম হয় যখন মানবকোষ থেকে জিন নিয়ে খরগোশ, গরু
অথবা ছাগলের ডিম্বে প্রোথিত করে ভ্রুণ সৃষ্টি করে তা থেকে স্টেম সেল তৈরী করার প্রস্তাব দেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীবৃন্দ।
প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় যে ব্রিটিশ সরকার এ ধরনের গবেষণাকে নিরুৎসাহিত করতে পরিকল্পনা করছে। এতে ধর্মীয় গ্রুপগুলোর চাপে মন্ত্রীগণ প্রভাবিত হচ্ছেন - এ দাবীটি শক্তিশালী হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিউমান ফারটিলাইজেশন এন্ড এমব্রায়োলজি অথোরিটি এ ধরনের গবেষণা দেখভাল করে। এ সংস্থাটি বলেছে যে কেবলমাত্র ব্যাপকমাত্রায় জিন-বিতর্ক এবং আলোচনার পরেই এ গবেষণায় অগ্রসরের অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
এ গ্রুপ বিশ্বাস করেন যে এ ধরনের গবেষণা বিপদজনক ও অনৈতিক। অন্যদিকে বিজ্ঞানীগণ অভিমত পোষণ করেন যে ডায়াবেটিস ও পারকিনসন রোগের মত নানাবিধ রোগের চিকিৎসার উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি গ্রুপের মধ্যে বিতর্ক দানা বাঁধছে।
এটি আশ্চর্য্য নয় যে অনেক মানুষ অস্বস্থি বোধ করেন যখন ডেইলি মেইল পত্রিকার শিরোনাম হিসেবে Scientist to create Franken Bunnyএর সাহায্যে চলচিত্র Donnie Darko-এর প্রতিচ্ছবি গড়ে তোলা হচ্ছে। বাস্তবত সত্য কিছুটা কম নাটকীয়। বিজ্ঞানীগণ যা করতে চান তা হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের স্টেম সেল তৈরী করা যা শরীরের যেকোনো টিস্যুতে বাড়তে পারে। শিরদাঁড়ার ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যুর পুরুৎপাদনে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভ্রুণ
এ ধরনের রোগবালাই ও তার চিকিৎসার জন্য নতুন ঔষধের সন্ধানে এই গবেষণা কাজের হতে পারে। বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার সময় সৃষ্টিকৃত ‘কৃশকায় ভ্রুণ যা অন্য সময় ধ্বংস করে ফেলা হয়, তা থেকেই এ পর্যন্ত এ ধরনের স্টেম সেল পাওয়া গেছে। এই ভ্রুণগুলো তাদের বিকাশের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যমান, এগুলো হচ্ছে সেলগুলোর বল যেগুলো পিনহেডের চেয়ে মোটেই বড় নয়। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশগুলোতে ধর্মীয় অধিকারসমূহের গতিরোধ করতে পারেনি। পাবলিক ফান্ড দিয়ে পরিচালিত গবেষণাতে এটির ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত। সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীগণ স্টেম সেল সৃষ্টির অন্বেষণ অব্যাহত রেখেছেন যা নির্দিষ্ট ব্যক্তির টিস্যুর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। দুটি কারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। প্রথমত এটি সমাধান করতে পারে টিস্যুর প্রত্যাখ্যান। কৃশকায় ভ্রুণ থেকে পাওয়া স্টেম সেল দিয়ে গঠিত টিস্যু প্রত্যাখ্যাত হয় অধিকাংশ মানুষের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা। কিন্তু রোগীর নিজের দেহ থেকে সৃষ্টিকৃত স্টেম সেল এ ধরণের সমস্যা অতিক্রম করতে পারে।
দ্বিতীয়ত ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্র বা স্নায়ুতন্ত্রের কিছু ব্যাধির মত নির্দিষ্ট ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে প্রস্তুতকৃত স্টেম সেল ব্যবহার করা যেতে পারে রোগগুলোর গবেষণাতে। টিস্যুর সাথে মানানসই স্টেম সেল প্রস্তুত করতে বিজ্ঞানীগণ ডলি ভেড়া প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত টেকনিকের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন। একজন নির্দিষ্ট মানুষের কোষ থেকে জিনগত তথ্য নিয়ে একজন মানুষের নিজস্ব জিন অপসারিত করে তার ডিম্বে স্থাপন করে ক্লোনকৃত ভ্রুণ তৈরী করা যেতে পারে। ঐ ব্যক্তির প্রায় অনুরূপ জেনেটিক মেক-আপ বিশিষ্ট স্টেম সেল প্রস্তুত করতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্লোনকৃত ভ্রুণ থেকে স্টেম সেল প্রস্তুতের দাবী করেছিল একটি কোরিয় গবেষণা গ্রুপ। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁদের ফলাফল ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছিল। যেখানে কোরিয় গ্রুপ ব্যর্থ হয়েছিল সেখানে যেকোন বিজ্ঞানী সফলতার আশাতে যে কেন্দ্রীয় সমস্যার সম্মুখীন হয় তা হচ্ছে মানব ডিম্ব পাওয়ার অসুবিধা। এইজন্য কিছু গবেষক বাধ্য হয়ে মানুষের পরিবর্তে প্রাণীর ডিম্ব বেছে নেয়। যেহেতু ডিম হচ্ছে মূলতঃ দাতা ব্যক্তির জিনগত তথ্য বহনের জন্য একটি পাত্র বিশেষ।
এখানে অনেক অজানা নিয়ামক আছে। এর একটি হচ্ছে পশুর ডিমের ক্ষুদ্র উপকোষীয় (subcellur) কণিকা মাইটোনড্রিয়াতে স্বল্প পরিমাণে এর নিজেরই জেনেটিক তথ্য বিদ্যমান থাকে। মাইটোকনড্রিয়া কোষের দরকারী শক্তি সরবরাহ করা ছাড়াও তাদের নিজেদের জিন বহন করে।
পশুর ডিম্বগুলোর রাসায়নিক কমপোজিশনে সুক্ষ্ম পার্থক্যও থাকতে পারে যা ভ্রুণ বিকাশের প্যাটার্ণে প্রভাব ফেলে থাকবে। সুতরাং, এ ধরণের গবেষণাতে সমাজতন্ত্রীদের প্রতিক্রিয়া কী? বর্তমানে সারা দুনিয়াতে নিযুত নিযুত মানুষের কারণ যে সমস্ত রোগবালাই, সেগুলো নিরাময়ে স্টেম সেল থেরাপির নিঃসন্দেহে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্যান্সার
স্টেম সেলের বাইওলজি গবেষণা থেকে ক্যান্সার সম্পর্কে অধিকতর ভাল ধারণা পাওয়া যেতে পারে। যাহোক এর সফলতার সুযোগ যতই অনুমানমূলক হোক, আমার মনে হয় মানব-পশু সংকরিত ভ্রুণ উৎপাদন স্টেম সেল এবং তাদের সম্ভাব্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের ধারণাতে অধিকতর অগ্রগতির সুযোগ দেয়। অন্যদিকে এ ধরনের সেলের আদৌ যদি চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হয়, তবে এর সম্ভাব্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারটির জরিপ হওয়া দরকার। পুঁজিতন্ত্রের অভ্যন্তরের সহজাত দ্বন্দ্বের একটি ভাল চিত্র দেয় স্টেম সেলের বর্তমান বিতর্ক। এটি বিস্ময়কর নয়া প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সামর্থ্য রাখে। যাহোক, জনগণকে হত্যার নতুন পথ উদ্ভাবনের উন্নয়নের জন্য ব্যয়িত অর্থের তুলনায় স্টেম সেল গবেষণায় প্রবাহিত অর্থের পরিমাণ খুবই নগন্য। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় উপসংহার টানা হয়েছিল যে যখন এই দেশে (ব্রিটেনে) স্টেম সেল গবেষণা এগিয়ে নেয়া হচ্ছিল, তখন অর্থের অভাব ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের এই ক্ষেত্রের বিষয়গুলো সামনের দিকে নিয়ে যাবার ব্যাপারে আপোষরফা করতে হচ্ছিল। ইতোমধ্যে, পৃথিবীতে ধণাঢ্য দেশগুলোর প্রতিনিধি সেলগুলোর পবিত্রতার ব্যাপারে আলোচনা করে, কিন্তু ইরাকে সবথেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা তারা ব্যবহার করছে বাস্তব, জীবন্ত মানব-সত্ত্বা হত্যার কাজে।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক Socialist Worker-এর ২০ জানুয়ারি ২০০৭ সংখ্যায় John Parrington-এর ‘Why we should defend stem cell research’ শিরোনামের নিবন্ধটির বাংলা অনুবাদ
লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক Socialist Worker-এর ২০ জানুয়ারি ২০০৭ সংখ্যায় John Parrington-এর ‘Why we should defend stem cell research’ শিরোনামের নিবন্ধটির বাংলা অনুবাদ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন